মৌলিক উদ্ভাবনী, পরিবেশগত গবেষণা, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়নে ধারণাপত্র তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ৪ জন শিক্ষক ও ৪ জন সাংবাদিককে গ্রিনম্যান অ্যাওয়ার্ডে দিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়।
অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান, হালদা নদীতে মাছের প্রজনন রক্ষা ও পানি দূষণ রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, পরিকল্পিত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০০ প্রজাতির গাছ ৩৮ হাজার বৃক্ষরোপণ করে সবুজ ক্যাম্পাস তৈরিতে ভূমিকা রাখায় অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, পরিবেশ বিপর্যয় রোধে জনসচেতনতা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় আরটিভির সিনিয়র রিপোর্টার মাইদুর রহমান রুবেল, ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট শাহরিয়ার অনির্বাণ, মাছরাঙা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার জাহেদ সেলিম ও সময় টিভির অ্যাসোসিয়েট সিনিয়র রিপোর্টার মার্জিয়া হাশমি মুমু।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যারা আজকে গ্রিনম্যান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন। পানি দূষণরোধে সরকারের চেয়ে জনগণের দায়িত্ব বেশি। কারণ প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ আর সরকার হলো সেবক। সুপেয় পানি প্রাপ্তিতে প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে। আমরা সরকারের দায়িত্ব নিয়ে সমালোচনা করি, কিন্তু আমি কী করেছি? এজন্য আত্ম-জিজ্ঞাসা করতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবেশ ও পানিকে আমরাই দূষিত করছি। এই দূষণের ব্যর্থতা আমাদেরই সংশোধন করতে হবে। শিশুদের মতো পরিবেশের পরিচর্যা করতে হবে। যেটি করছে পরিবেশ আন্দোলন। বিদ্যা সহজ আর শিক্ষা কঠিন। শিক্ষা কঠিন হওয়ায় আমাদের আচরণের পরিবর্তন হচ্ছে না। আমরা প্রতিদিন শুনি, কিন্তু মানি না।
নিরাপদ পানি ব্যবস্থা জোরদার করতে সবুজ আন্দোলনের তথ্য ও গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে ৯ টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো।
১) ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের সংশোধন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জনসচেতনতার জন্য প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে।
২) সারা বাংলাদেশে নদীর নাব্য সংকট দূরীকরণে সব নদী খননের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সমুদ্রের সঙ্গে নদীর গতিপথকে সচল রাখতে হবে।
৩) বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে সমুদ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যার ফলে ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের পানি সংকট দূর করা সম্ভব।
৪) নদীতে কলকারখানার বর্জ্য অপসারণ বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং ইটিপি ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাইপাস ক্যানাল পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং প্লাস্টিক পণ্য নদীতে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।।
৫) নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী বেড়িবাঁধ, ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ করা, জাহাজভাঙা শিল্প বর্জ্য অপসারণের সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করা, জাহাজ ডুবি রোধে ফিটনেসবিহীন নৌযান ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৬) উপকূলীয় অঞ্চলে সরকার ও উন্নয়ন অংশীদার প্রকল্প জোরদার করা। যার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ এবং সুপের পানির নিশ্চিত ব্যবস্থা করতে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব।
৭) ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্র হিসেবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে উন্নত রাষ্ট্রগুলোকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে বিরত রাখতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সভা সেমিনার ও সমাবেশের ব্যবস্থা করা। পরিবেশ কর্মীদের সঙ্গে স্টেকহোল্ডার বডি তৈরি করতে সচেষ্ট হতে হবে।
৮) মাটির উর্বরতা ধরে রাখতে কেমিক্যাল স্যারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করা, উন্নত বীজ, সার ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার যন্ত্রাংশ সরবরাহে সরকারের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯) উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য মিনি হাসপাতাল নির্মাণ এবং নিরাপদ পানি ব্যবহারের গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক যুগ্ম সচিব জাহিদুল হক সরদার, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, মেডিসিন ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সাকিরা নোভা, নদী ও সমুদ্র গবেষক এস এম আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন, নদী অধিকার মঞ্চের সমন্বয়কারী শমসের আলী, সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের মহাসচিব মহসিন সিকদার পাভেল, অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন রুপা, পরিচালক অধ্যক্ষ নাদিয়া নূর তনু, শেখ এনামুল হক রনি। সঞ্চালনা করেন সবুজ আন্দোলনের পরিচালক অভিনেতা উদয় খান ও সহ-নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক দিনা আমিন প্রমুখ।