আনিসুর রহমান :
রাজনীতিবিদ মকবুল সাহেব কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন কদিন হলো । এমন একজন রাজনীতিবিদের মৃতু্য সত্যি আমাদের শোকাহত করে । তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ।
মকবুল সাহেব একটি বিশাল বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের মালিক । কিন্তু নিজের যে হাসপাতালে লক্ষ লক্ষ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন সে হাসপাতাল বা সিভিলিয়ান বা বেসরকারি হেলথকেয়ার সিস্টেম অন্য যেকোনো হাসপাতাল এর উপর খুব একটা আস্থা রাখতে পারেননি হয়ত তিনি। তাই সামরিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শরণাপন্ন হতে হয়েছে তাকে।
এটা ধারণা করা হয় যে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের একটা বড় অংশের শেয়ার রয়েছে তার । তিনি এবং তার পরিবার ব্যাংকক এ বামরুনগ্রাদের আশেপাশে বেশ কিছু হোটেলেও রয়েছে অংশিদারিত্ব ।
এখন সময় স্বাভাবিক থাকলে মকবুল সাহেব সামান্য অসুস্থতাতেই ব্যাংকক চলে যেতেন – চিকিৎসা ওখানেই হতো। কিন্তু এখন সময় স্বাভাবিক না।
উনি একা কেন – দেশের শীর্ষ ধনী এস আলম গ্রূপের কর্ণধাররা আজ অনেকেই অসুস্থ কোভিড আক্রান্ত হয়ে| একজন মারা গেলেন – বাকি আরো একজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন সিএমএইচ এ। এখন যখন সিঙ্গাপুর ব্যাংকক সব বন্ধ, সিএমএইচ হয়ে গিয়েছে দেশের ভিআইপিদের আশ্রয় স্থল।
শুধু মকবুল সাহেব কেন – খবর পেলাম বাংলাদেশের সিভিলিয়ান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রধান প্রশাসক ডিজিএইচএস মহোদয় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সিএমএইচ এ ভর্তি আছেন।
সরকারি সিভিলিয়ান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ওন করেন যারা, পরিচালনা করেন যারা- তারা কেন সিভিলিয়ান স্বাস্থ ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখতে পারছেন না নিজেদের প্রয়োজনের সময়ে ? প্রশ্নটা এখন বার বার মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে ।
প্রথমে বলি সিএম এইচ এর কথা । কেন ভিআইপিরা সিএমএইচকে প্রেফার করছেন সর্বশ্রেষ্ঠ বেসামরিক হাসপাতাল গুলোতে আস্থা না রেখে। এর নিশ্চয়ই কারণ আছে। আমি নিজে সিএমএইচ এর সিস্টেম দেখেছি, ওদের ওয়ার্ক এথিক্স দেখেছি, ওদের সুপার্ব ম্যানেজমেন্ট দেখেছি| আমি ব্যাংকক এর হাসপাতাল গুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্বন্ধে বেশ ওয়াকেবহাল ।
আমার ধারণ সিএমএইচ এর স্বাস্থ্য সেবা ব্যাংককের কোনো হাসপাতাল থেকে কোনো অংশেই কম না| বাই এনি মিন্স সিএমএইচ একটা ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে| কিন্তু দেশের সামরিক চিকিৎসা ব্যবস্থা যা পারে বেসামরিক চিকিৎসা ব্যবস্থা তা পারে না কেন? ওদের যে চিকিৎসক তাঁরা কিন্তু দেশের বেসামরিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসা!
ওরা আমাদের বেসামরিক সিস্টেমেই পোস্ট গ্রেজুয়েট ট্রেইন্ড!। একটা পারসেপশন আছে সিএমএইচ এর নাকি আনলিমিটেড ফান্ড! আমার ধারণা তা সঠিক না। সামরিক স্বাস্থ ব্যবস্থার চিকিৎসক নেতৃবৃন্দকে এই কোভিড ক্রাইসিস এর সময় এবং এর আগেও প্রজেক্টওয়ারী ক্রাউড সোর্সড ফান্ড রেইজ করতে দেখেছি। তাহলে সিক্রেট টা কি?
আমি মনে করি সিক্রেট টা হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট আর নেতৃত্ব একই বৃত্তে দুই ফুলের মতো একই মেডিকেল কলেজ এ পড়াশোনা করে, একই সাথে পোষ্ট গ্রেজুয়েট করে দুই সহপাঠির এক সহপাঠী সিএমএইচ এর মতো একটা কাটিং এজ হেলথকেয়ার সিস্টেম এর অংশ, আরেক সহপাঠী সরকারি হাসপাতাল এর অব্যবস্থপনা অচলায়তনের অংশ। এই প্রেক্ষিতে বলা যায় যে সমস্যটা ক্লিয়ারলি চিকিৎসক না – সমস্যা টা বেসরকারি খাতের ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা।
আবার গণহারে সরকারী বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকে ব্যর্থ বলা ও ঠিক না, সঠিক নেতৃত্ব আর রোবাস্ট ম্যানেজমেন্ট এর বদৌলতে দেশের নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট সরকারি হাসপাতাল মধ্যে ওয়েসিস!
এখানেও একই কথা, একটা ভালো নেতৃত্ব চিকিৎসকদের মধ্যে উদ্দীপনা নিয়ে আসে,সেন্স অফ ও উনারশিপ ক্রিয়েট করে । একটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রধান যদি নিজের অসুস্থতার সময় নিজের সিস্টেম এর উপর ভরসা রাখতে না পারেন, তাহলে ধরে নিতেই হবে ব্যর্থতাটা সিস্টেম এর, এর নেতৃত্বের, ট্রেইনিং ও রোল মডেলদের – চিকিৎসক দের না ।
আশা করি এই কোভিড প্যান্ডেমিক আমাদের এই শিক্ষাটাই দেবে যে সবসময়েই বিদেশের হাসপাতাল গুলো এভেইলেবল নাও হতে পারে, সেজন্যে দেশের বেসরকারী চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা টাকে ভাল ভাবে ম্যানেজ করতে হবে ।
আপনি যদি একটা হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ ওন করেন তাহলে প্লিজ ওই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনে নিজের চিকিৎসা নেবেন এই কথাটা মাথায় রাখুন। এতে দেশের বেসামরিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে।
তথ্যসূত্র : বিভিন্ন গণমাধ্যম । লেখক : রাজনীতিক ও প্রকাশক, শেরপুর টাইমস।