শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী খারামোড়া ও রাঙ্গাজান নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত দু’টি গ্রাম। এ দু’গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। গ্রাম দু’টো বাংলাদেশের ভু-খন্ডে হলেও খর¯্রােতা সোমেশ্বরী নদীর কারণে দেশের ভু-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন বললে এতটুকু ভুল হবে না। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে নেমে আসা সোমেশ্বরী নদী গ্রাম দু’টোকে আলাদা করে রেখেছে।
এর সাথে ঘেষা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পোরাকাশিয়া। বলতে গেলে এ গ্রাম দু’টোর সাথে ভারতের ভু-খন্ডের মিল রয়েছে সোমেশ্বরী নদীর কারণে। গ্রামের সর্বত্রই কাচা রাস্তা। বর্ষাকালে কাঁদার কারণে হাঁটা চলা কঠিন হয়ে যায় গ্রাম বাসিদের। স্বাধীনতার কতগুলো বছর কেটে গেছে। কতগুলো সরকার পরিবর্তন হয়েছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। শুধু মাত্র পরিবর্তন হয়নি খারামোড়া ও রাঙ্গাজান গ্রামের মানুষের। গ্রাম দু’টোতে লাগেনি উন্নয়নের কোন ছোঁয়া। গ্রাম বাসিদের জীবন যাত্রার মানও সেকেলে।
তাদের যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই অনুন্নত। মুসলমান, গারো, কোচ, হাজং ও বানাই এ গ্রাম দু’টোর অধিবাসি। তাদের সিংহ ভাগই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এরা মাঝে মধ্যেই আতংকিত থাকে বন্যহাতির ভয়ে। বন্য পশুদের সাথে সংগ্রাম করে চলে এদের জীবন। আমন ও বোরো মৌসুমে ভারতের গহীন অরণ্য থেকে নেমে আসা বন্য হাতির পাল তাদের কষ্টার্জিত কৃষি ফসল খেয়ে সারাড় করে ফেলে।
তখন তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। শুধু তাই নয় হাতি তাড়াতে গিয়ে হাতির আক্রমণে গত কয়েক বছরে অনেক প্রাণ হানি হয়েছে। এখানে রয়েছে ১টি খ্রিস্টান মিশনারিজ স্কুল, ১টি প্রাথমিক স্কুল ও ১টি দাখিল মাদরাসা। গ্রাম বাসিদের স্বাস্থ্য সেবার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ধুকে ধুকে মরা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। উপজেলা সদর থেকে এর দুরত্ব প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার।
গ্রামের কেহ অসুস্থ্য হলে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার জন্য খর¯্রােতা সোমেশ্বরী নদী পাড়ি দেওয়া অনেক কষ্টের। নৌকা বা ভেলা ¯্রােতের তুরে ভেসে যায়। যার জন্য নদীর পানি না কমা পর্যন্ত তাদের থাকতে হয় গৃহ বন্দি হয়ে। উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করাও অনেক কষ্টের। নদীর ওপাড়ে বালিজুরি বাজার ও উচ্চ বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও ঠিক মত যেতে পারে না পড়াশুনা করতে। কৃষকদের কৃষি পণ্য বাজার জাত করতে সমস্যায় পরতে হয় নদীর কারণে।
এর আশ পাশে রয়েছে তাওয়াকুচা বিজিবি ক্যাম্প। এ নদীর কারণে বিজিবি জওয়ানদেরও সীমান্ত ঘেষা এ গ্রাম দু’টোতে ঠিক মত তাদের কর্তব্য পালন করতে অসুবিধায় পরতে হয়। আশ পাশে রয়েছে খ্রিস্টান পল্লী, হালুহাটি, হাতিবর, মালাকোচা, কালিবাড়িসহ কয়েকটি গ্রাম। এসকল গ্রামের কৃষকদেরও ওই গ্রাম গ্রাম গুলোতে রয়েছে কৃষি জমি ও আতœীয় স্বজন।
এসকল গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার লোকের যাতায়াতের সমস্যা একমাত্র সোমেশ্বরী নদী। শুকনা মৌসুমে এ নদীর উপড় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে পাড়াপাড় হয় এ অঞ্চলের মানুষ। সোমেশ্বরী নদী এ অঞ্চলের মানুষের জন্য শুধুই দুঃখ। খর¯্রােতা এ নদীর উপড়ে একটি সেতু নির্মিত হলে খোলে যাবে পিছিয়ে পরা এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা। উন্নত হবে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত মানুষের জীবন যাত্রার মান।