এ এম আব্দুল ওয়াদুদ
মানুষ সামাজিক জীব,সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে।সুন্দর সুচারুভাবে জীবন পরিচালনা করার জন্য একে অপরের প্রতি নানাবিধ কারণে নির্ভর করতে হয়।কেননা একজন মানুষ সববিষয়ে পারদর্শী নয় তাই একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া জীবন যাপন করা কঠিন।
মানুষের সদগুণাবলির অন্যতম হচ্ছে পরোপকার, একে মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের অলঙ্কারও বলা হয়।
কোরআন ও হাদিসে পরোপকার সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তাই নিয়ে আজকে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
পরোপকারের আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘ ইহসান ‘ , যার অর্থ অন্যের উপকার করা।আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি মানুষের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে সেগুলোকে উত্তম বা যথাযথভাবে পালন করার নামই পরোপকার।
সুরা আলে ইমরানে ১১০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন,
کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ ؕ وَ لَوۡ اٰمَنَ اَهۡلُ الۡکِتٰبِ لَکَانَ خَیۡرًا لَّهُمۡ ؕ مِنۡهُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ اَکۡثَرُهُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ﴿۱۱۰﴾
(আয়াতের অর্থ)
তোমরাই সর্বোত্তম উম্মাত, মানবজাতির (সর্বাত্মক কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভুত করা হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ কর ও আল্লাহর প্রতি ঈমান রক্ষা করে চল। যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তাহলে নিশ্চয়ই তাদের জন্য ভাল হত, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মু’মিন এবং তাদের অধিকাংশই ফাসেক।
পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মনীষীগণ স্মরণীয় হয়ে আছে পৃথিবীতে তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন পরোপকারী।মানুষের কল্যাণের কথা তাঁরা চিন্তা করতে, বিপদ আপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন।অনাথ-অসহায় ও অনাহারির কষ্টে তাঁরা ছিলেন সমব্যথী।
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম ওহিপ্রাপ্তির পর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে খাদিজা (রা.)-কে বললেন, ‘আমাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দাও, আমি আমার জীবনের আশঙ্কা করছি।’ তখন খাদিজা (রা.) নবীজি (সা.)-কে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ কখনোই আপনার অমঙ্গল করবেন না। কারণ, আপনি আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করেন, গরিব-দুঃখীর জন্য কাজ করেন, অসহায়-এতিমের ভার বহন করেন,
তাদের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।’ (বুখারি: ৪৫৭)।
দান-সদকা ও অন্যের জন্য খরচে উদ্বুদ্ধ করে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। আল–কোরআনে রয়েছে, ‘কে আছে যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা উত্তম ঋণ দেবে, তাহলে তিনি তার জন্য একে বর্ধিত করে দেবেন এবং তার জন্য সম্মানজনক প্রতিদানও রয়েছে।’ (সুরা-৫৭ হাদিদ, আয়াত: ১১)।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তাআলা তার আখিরাতের সংকটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলাও তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (মুসলিম: ২৬৯৯)।
ইসলাম সহানুভূতির ধর্ম। পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতা ইসলামের অন্যতম বিষয়।নবী কারিম (সা.) বলেছেন, সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। তাই পরোপকারের চেতনায় কোনো শ্রেণিভেদ নেই। বড়-ছোট, ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়, স্বজাতি-বিজাতি, মুসলিম-অমুসলিম এসব ব্যবধানের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামের শান্তি ও সৌহার্দ্যের সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মিলেমিশে থাকে। তার মধ্যে ভালো কিছু নেই, যে মিলেমিশে থাকতে পারে না। যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সে-ই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ (আল-মুজামুল আওসাত: ৫৭৮৭)।
নবী করিম (সাঃ) আরো বলেন, তোমার ভাইয়ের চেহারায় তাকিয়ে মুচকি হাসাও তোমার জন্যে একটি সদকা। সৎকাজের প্রতি আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে বাধাপ্রদানও সদকা। পথ হারানো কাউকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়াটাও তোমার জন্যে সদকা। দৃষ্টিশক্তি দুর্বল- এমন কাউকে সহযোগিতা করাও তোমার জন্যে সদকা। রাস্তা থেকে পাথর, কাটা আর হাড্ডি সরিয়ে দেওয়াও তোমার জন্যে সদকা। ভাইয়ের বালতিতে তোমার বালতি থেকে একটু পানি ঢেলে দেওয়াও তোমার জন্যে সদকা। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৫৬)।
যেখানে অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলাও সওয়াব। তাহলে এক জনের প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁকে সাহায্য করা না জানি কতটা সওয়াবের কাজ।তাই আমাদের উচিত একে অপরের বিপদ আপদে এগিয়ে আসা,মানুষের কল্যাণে কাজ করা।শুধু নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত না হয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতেও চেষ্টা করা।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।