পর্তুগালের জার্সিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অভিষেক হয়েছিল ২০০৩ সালের ২০ আগস্ট। কাজাখস্তানের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ দিয়ে শুরু করা সেই রোনালদো আর পেছনে ফিরে তাকাননি। লুইস ফিগো, রুই কস্তা, ডেকোর মতো খেলোয়াড়া তখন ছিলেন পর্তুগাল দলে। প্রায় ২০ বছর কেটে গেলো; কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এখনো দেশটির সুপারস্টার।
২৪ নভেম্বর ঘানার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে রোনালদোর পর্তুগাল। তখন সবার চোখ আটকে থাকবে ওই রোনালদোতেই। বছর বছর পর্তুগিজদের যে দলটি তৈরি হয় সেটা রোনালদোকে কেন্দ্র করেই। পর্তুগালের জার্সিতে ১৯১ ম্যাচ খেলে ১১৭ গোল করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এর বাইরেও তিনি অনেক মর্যাদা অর্জন করতে পেরেছেন। যদিও সাম্প্রতিক সময় অবশ্য দলে তার ভূমিকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে।
পর্তুগালের জার্সিতে সর্বশেষ ৯ ম্যাচে রোনালদো প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পাননি। তারপরও দলের সবার রোনালদোর ওপর সমর্থন রয়েছে বলে ফিফা ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন পর্তুগিজদের অন্যতম তারকা ফুটবলার বের্নারদো সিলভা।
‘বাস্তবতা হলো- যখন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো একজন খেলোয়াড় পাশে পাবেন তখন আপনি কখনো কখনো তার জন্য খেলবেন। কারণ, তিনি শেষ মুহূর্তে হলেও দলকে জয় এনে দিতে পারেন। এটা কেবল পর্তুগালের ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য দলেও উদাহরণ আছে। এই যেমন ফ্রান্সের সর্থকরা সব সময়ে এমবাপ্পের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আর্জেন্টিনার মেসি কিংবা ব্রাজিলের নেইমার। তারা যে কোনো সময় ম্যাচে চিত্র বদলে দিতে পারেন’ – বলছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।
এ ধরণের ফুটবলার পাশে থাকাটা একটা অ্যাডভান্টেজ উল্লেখ করে সিলভা বলেছেন, ‘এমন খেলোয়াড় যখন আপনার পাশে থাকবে তখন আপনাকে সে সুবিধা নিতে হবে। তবে আমি এতেও একমত যে, কোন একজনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হতে পারবেন না। কারণ, তাতে দলের গতিটা ব্যহত হতে পারে। তবে আমরা এটা ঠিক করেছি যে, রোনালদো দলে থাকাটা একটা বড় অস্ত্র। এর আগে তিনি চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন।’
ম্যানচেস্টার সিটির প্রধান কোচ পেপ গার্দিওলা প্রায় বলেন, ‘বের্নারদো কেবল বল নিয়ে কি করতে হবে সেটাই জানেন না, সে সত্যিই গেমটি বোঝে। যদিও প্রিমিয়ার লিগে সপ্তাহে সপ্তাহে যে পারফরম্যান্স দেখান পর্তুগালের হয়ে সেটা করা সহজ কাজ নয়। কারণ, প্রত্যেক কোচেরই ভিন্ন কৌশল ও স্টাইল থাকে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিজের স্টাইলটা মানিয়ে নিতে হয় প্রত্যেক কোচকে। কারণ, জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা আসেন বিভিন্ন ক্লাব থেকে। যেখানে দলগুলোর কোচের কৌশলও থাকে ভিন্ন ভিন্ন। সবাইকে একই দর্শনের মধ্যে আনার কাজটিও সহজ নয়।’
কোচ ফার্নান্দো সান্তোসকে নিয়ে আস্থার কমতি নেই বের্নারদোর, ‘তিনি ২০১৪ সাল থেকে পর্তুগালের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আরেকটি বিশ্বকাপে তিনি আত্মবিশ্বাস নিয়েই যাবেন। তিনি এমন একজন কোচ যিনি আমাদের দলের সঙ্গে অনেক সাফল্য উপভোগ করেছেন। তিনিই একমাত্র কোচ যিনি পর্তুগালের হয়ে জিতেছেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (২০১৬) এবং উয়েফা নেশন্স লিগ (২০১৯)। আমার বিশ্বাস তিনি যে কাজ করেছেন তাতে পর্তুগিজরা খুশি। সম্প্রতি আমরা একটু খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ভুল-ত্রুটিগুলো দূর করতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি।’
রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়া পর্তুগালের এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জানান, কাতারে ভিন্ন গল্প লিখতে চান। চ্যাম্পিয়নশিপ উদযাপন করেই ঘরে ফেরার লক্ষ্য তাদের। ‘এটি অবশ্যই আমি স্বপ্ন দেখি। এই স্বপ্ন প্রতিটি বাচ্চারও। বিশ্বকাপের মতো সর্বোচ্চ আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে স্বপ্ন সেটা আমরা সবাই ভাগ করে নেই। সবাই মিলে কিছু করতে হয়। সেটা আপনার ক্লাবের জন্য হোক, কিংবা দেশের জন্য’ – বলেন বের্নারদো।