‘কী অপরাধ করছিল আমার মাইয়া। দুইডা ভাতের লাইগা শাকিলের বাড়িতে কাজে দিছিলাম। আর শাকিলের বউ ঝুমুর আমার মাইডারে নির্যাতন কইরা মাইরা হালাইল। আল্লাহ তুমি ওই ডাইনির বিচার কইরো।’
নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সাদিয়ার মৃত্যুর পর তার মা আনোয়ারা এভাবেই চিৎকার করে আহাজারি করছিলেন আর মেয়ে হত্যার বিচার চাইছিলেন। শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় গৃহকর্মী সাদিয়া। সে শ্রীবরদী পৌরশহরের মুন্সীপাড়া এলাকার হতদরিদ্র ট্রলি চালক সাইফুল ইসলামের মেয়ে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব শাকিলের বাসভবন থেকে রাত দেড়টায় গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে শিশু সাদিয়াকে। শাকিলের স্ত্রী রুমানা জামান ঝুমুর (৩৫) শিশুটিকে নানা অজুহাতে নির্যাতন করতেন।
এক পর্যায়ে নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে, শিশুটির গায়ের বিভিন্ন স্থানে গরম ছ্যাঁকা দেওয়া থেকে শুরু করে গোপনাঙ্গে পর্যন্ত আঘাত করা হয়। নির্যাতনের ফলে তার মাথায় ব্যাপক ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পিঠে আগুনের ছ্যাঁকায় ঘা দেখা দেয়। ওই দিন গভীর রাতে নির্যাতনের শিকার শিশুটির আর্তনাদ শুনে প্রতিবেশীরা ৯৯৯ ফোন করেন। পরে পৌরশহরের বিথি টাওয়ারের ৬ তলায় শাকিলের ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে শিশুটিকে। পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে শেরপুর জেলা হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে।
এ ঘটনায় শিশুর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শ্রীবরদী থানায় একটি মামলা করেন। পরদিন গ্রেপ্তাররের পর আদালতের মাধ্যমে আসামি ঝুমুরকে কারাগারে পাঠানো হয়।
শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন খোকা জানান- ছেলে শাকিলের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। অনেক আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে সে ভাড়া বাসায় থাকতো। পরে শ্রীবরদী বিথি টাওয়ারে ওঠে। কাজের মেয়ের সঙ্গে ছেলে বউয়ের সম্পর্ক তার জানা নেই।
শ্রীবরদী থানার ওসি মোহাম্মদ রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, মেয়েটিকে আমানষিক নির্যাতন করা হয়েছে। এর ফলে শুক্রবার শিশুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
তিনি বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় শিশুর বাবা বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করে। সেই মামলায় গৃহকত্রী ঝুমুর বর্তমানে জেলা কারাগারে আছে। শিশু সাদিয়া মারা যাওয়ায় মামলাটি এখন হত্যা মামলার দিকে যাবে