জেলার একমাত্র নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টটিতে সম্প্রতি অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একাংশসহ মেঘালয়, আসাম, অরুনাচল ও মিজোরাম এবং নেপাল ও ভূটানে ভ্রমন পিপাসুদের সহজতর রুট হওয়ায় দিন দিন লোকসমাগম বাড়তে শুরু করেছে এ ইমিগ্রেশন চেক পোষ্ট দিয়ে। তবে সে তুলনায় যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি গত ২০ বছরেও।
জানাগেছে, প্রথমে ১৯৪৮ সালে জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্ত এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার বারাঙ্গাপাড়া থানাধিন ডালু সীমান্ত দিয়ে দু’দেশের জনসাধাণের পারাপারের জন্য ইমিগ্রেশন চেক পোষ্ট চালু হলেও নানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশ স্বাধিন হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে আবারও চালু হয় ইমিগ্রেশন চেক পোষ্টটি।
এছাড়া ২০০৪ সালে এখানে চালু হয় শুল্ক স্টেশন এবং পরবর্তিতে ওই শুল্ক স্টেশনটি পূর্নাঙ্গ স্থল বন্দরে রূপান্তরিত হয় ২০১৪ সালে। বর্তমানে স্থল বন্দরটি দু’দেশের ব্যবসা মন্দার কারণে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়লেও ইমিগ্রেশন চেক পোষ্টদিয়ে দু’দেশের লোক যাতায়াত ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে।
এ চেকপোষ্ট দিয়ে চলাচলরত ভারত এবং বাংলাদেশের ভ্রমনকারী এবং ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানাগেছে, ভারতের মেঘালয়ের শিলং, আসামের গোহাটি, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিংসহ মিজোরাম ও অরুনাচলের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মানুষের জন্য সহজতর হয়ে উঠেছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে এ চেকপোষ্টের লোক যাতায়াত।
মাত্র ৪/৫ বছর আগেও ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্তের দু’পাশেই সড়ক যোগাযোগ ছিল খুবই নাজুক। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরের নকলা হয়ে নালিতাবাড়ি উপজেলা সদর হয়ে নাকুগাঁও সীমান্ত পর্যন্ত প্রসস্থ সড়ক নির্মান হয়েছে।
অপরদিকে ভারতের ডালু সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার উত্তরে তুরা শহরের রাস্তা নির্মান এবং তুরা থেকে আসামের গোহাটি হয়ে শিলং পর্যন্ত কোথাও ছয় লেন এবং কোথাও চার লেনে উন্নিত হওয়ায় প্রকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, গোহাটি, শিলংসহ নেপাল ও ভুটানে ভ্রমনের জন্য সহজতর রুট তৈরি হয়েছে। যে কারণে এ ইমিগ্রেশন চেপোষ্ট দিয়ে লোক সাধারণের ভ্রমন যোগাযোগ ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, কুড়িগ্রাম এবং লালমনির হাট জেলার মধ্যে ইমিগ্রেশন চালু রয়েছে উত্তর পূর্বের সিলেটের ডাউকি, শেরপুরের নাকুগাঁও এবং দেশের উত্তরাঞ্চল জেলার লালমনির হাটের বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে। ফলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মানুষদের জন্য শেরপুরের নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন পয়েন্টটি ভ্রমনকারীদের সহজ রুট তৈরী হয়েছে।
ভারতের তুরা শহরের উপকন্ঠে একটি বিমান বন্দর নির্মানাধিন রয়েছে বলে স্থানীয় একটি সূত্রে জানাগেছে। ওই বিমান বন্দরটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষকে আর অনেক ঘুরে বেনাপোল হয়ে কোলকাতা বা ভারতের অন্য রাজ্যে যেতে হবে না। নাকুগাঁও-ডালু হয়ে তুরা শহর থেকেই বিমান পথে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাতায়াত করা যাবে খুব সহজেই। এছাড়া তুরা থেকে শিলং বা আসামের গৌহাটিসহ অন্য যে কোন স্থানে দ্রুত ও সহজ যাতায়াতের জন্য প্রাইভেট হেটিকপ্টারের ব্যবস্থা রয়েছে বলে সূত্রে জানাগেছে।
কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টে পুরোপুরি অনলাইন চালু না হওয়া, ভ্রমন কর জমা দেয়ার জন্য কোন ব্যাংক না থাকা এবং বৈদেশিক মূদ্রা বদলানোর জন্য মানি চেঞ্জার না থাকায় ভ্রমনকারীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানালেন ভারতীয় ও বাংলাদেশী কয়েকজন ভ্রমনকারী।
ইমিগ্রেশন ভবনটি পুরাতন টিন সেড ঘরে প্রতিষ্ঠা হওয়ায় যাত্রীদের বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এবং টয়েলেটের সুবিধা নেই। ফলে মহিলা যাত্রী বা ভ্রমনকারীদের সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানালেন বাংলাদেশী এক মহিলা ভ্রমনকারী।
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ভ্রমনপিপাসু মানুষ বেড়াতে গেলেও এ সীমান্ত দিয়েও রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রদেশের দর্শনীয় স্থান। এ ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টের সুযোগ-সুবিধা বাড়লে আরো ভ্রমনকারীর সংখ্যা বাড়বে এবং পাশিপাশি দেশের রাজস্ব আয়ও বাড়বে বলে মনে করেন ভারত-বাংলাদেশী ভ্রমনকারীরা।
ভ্রমনকারীদের সূত্রে জানাযায়, বাংলাদেশের কাস্টমস এর অবকাঠামো তৈরী এবং লোকবল থাকলেও সেখানে এখনও স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়নি। ফলে বাংলাদেশ থেকে বর্হিগমন এবং ভারত থেকে আগমন যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করতে হয় হাত দিয়েই।
ভারত সীমান্তের ডালু চেক পোষ্টেও একই অবস্থা। সেখানেও কোন ব্যাংক নেই। নেই মানিচেঞ্জার। ওখানে কাস্টমস ভাবন তৈরী হলেও ইমিগ্রেশন ও বিএসএফ চৌকিতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরী হয়নি। এছাড়া সেখানে ইমিগ্রেশন করতে হয় সীমান্ত থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার অদুরে ছইপানি ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে।
ভ্রমানকারীদের উল্লেখিত বিষয়ের পাশপাশি উভয় দেশের সীমান্তের কাছে থাকা ও খাওয়ার হোটেল এবং উপজেলা বা শহরে যাতায়াতের পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। এসব হলে এ সীমান্ত দিয়ে আরো লোক যাতাযাত বেড়ে দেশের অন্যতম ইমিগ্রেশন চেক পোষ্টের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভ্রমনকারীরা মনো করছে।
নালিতাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফসিহুর রহমান জানায়, ইমিগ্রেশন অফিসের অবস্থা নাজুক থাকলেও সম্প্রতি ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন হওয়া ৬ তলা ভবনের কাজ যে কোন সময় শুরু হবে এবং অনলাইন সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ভবন নির্মান শেষ হলে ইমিগ্রেশনে ভ্রমনকারীদের আর কোন সমস্যা থাকবে না।
কাস্টমস, একসাইজ ও ভ্যাট অফিসের রাজস্ব কর্মকর্তা ইমাম হোসেন জানায়, এ সীমান্ত দিয়ে ভারতের চমৎকার দর্শনীয় স্থান রয়েছে। কাস্টমস বিভাগে সকল অবকাঠামো এবং যথেষ্ট লোকবল রয়েছে, স্ক্যানিং মেশিন না থাকলেও ভ্রমনকারীর সংখ্যা খুব বেশী না হওয়ায় হাতেই চেকিং এর কাজ করা, তবে কোন সমস্যা নেই। উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের কাছে দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি বলেন, এখানে ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার অফিস হলে আর কোন সমস্যা হবে না ভ্রমনকারীদের।
কাস্টমস বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এ পথে বহির্গমন ছিল ১৩৭৮ জন এবং আগমন ৯১৯ জন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বর্হিগমন ছিল ২০৯৪ জন এবং আগমন ৮২১, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বর্হিগমন ৩০০১ জন এবং আগমন ১২৯০ জন এবং চলতি অর্থ জুলাই মাসে বর্হিগমন হয়েছে ২০০ জন এবং আগমন করেছে ৪৮ জন মানুষ।
এতে প্রতি বর্হিগমন ভ্রমনকারীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে ভ্রমন কর হিসেবে সরকারের মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা।