সুনামগঞ্জে উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১২৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাছ চাষিরা। এর মধ্যে দুটি উপজেলা ক্ষতি হয়েছে বেশি।
জেলা মৎস কর্মকর্তারা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে এসব পুকুর তলিয়ে যায়। মৎস বিভাগে হিসাব মতে, এ পর্যন্ত জেলার ১২৫০ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের সংখ্যা আরও বাড়বে। এসব পুকুরে বিভিন্নজাতের বড় মাছ ও পোনা ছিল। এতে টাকার অংশে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৫৮টি এবং ছাতক উপজেলায় ১৫৭টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এসব পুকুরে ৬০ মেট্রিক টন মাছ ছিল। পোনা ছিল প্রায় ৫০.লাখ।
জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার রঙ্গারচর এলাকার মুমিন ফিশারিজ অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেডের মালিক মো. আবদুল আলীম জানান, তার খামারে সাতটি পুকুরে মাছ ও পোনা ছিল। এর মধ্যে চারটি পুকুর বন্যায় তলিয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
আবদুল আলীম বলেন, গত বছরও বন্যায় খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারও হলো। মাছের খাবারের দোকানে দেনা আছে ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক ঋণের কিস্তি আছে। সব মিলিয়ে বড় অসহায় আবস্থায় আছি।
একই উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের বাসিন্দা মাছচাষি নুরুল ইসলাম জানান, তার মাছের খামারের তিনটি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এসব পুকুরে রুই, কাতলা, পাঙ্গাসসহ বিভিন্নজাতের মাছ ছিল। মাছগুলোর ওজন ছিল দুই থেকে আড়াই কেজি। ঈদের পর মাত্র মাছ বিক্রি শুরু করেছিলেন। এর মধ্যেই পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেয়।
নুরুল ইসলাম বলেন, অন্তত ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১৯ একরের একটি পুকুরে কেবল বড় মাছ ছিল। সব ভেসে গেছে। এখন পথে বসার অবস্থা।
একই এলাকার দীন ইসলাম জানান, তারও চারটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তিনি বলেন, অনেক টাকা দেনা আছি। এই মাসেই সব মাছ বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সর্বনাশ হয়ে গেছে।
sunam1
টেংরা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, আবদুর রহিমের মাছের খামারও ডুবে গেছে বন্যার পানিতে। আবদুর রহিম বলেন, দুই দিনেই সব শেষ হয়ে গেছে। এখন তো পুকুরগুলোর কোনো চিহ্ন নেই। সব পানির নিচে। শুরুতে মাছ রক্ষায় চেষ্টা করেছি। কিন্তু পরে বন্যা হওয়া সব তলিয়ে যায়। এই এলাকার সব মাছ চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলায় মাছের খাবার বিক্রির ডিলারদের একজন ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘শুধু মাছ চাষিরা নয়, তাদের সঙ্গে আমরাও বিপাকে পড়েছি। চাষিদের কাছে অনেক টাকা পাওনা। অনেকে ক্ষতির বিষয়টি জানাচ্ছেন। সরকার থেকে মাছ চাষিদের পাশে না দাঁড়ালে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
জেলা মৎস কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল বলেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকাতেও মাছ চাষিদের পুকুর আছে। এখনও আমরা পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির হিসাব পাইনি। আমরা সব উপজেলাতেই খোঁজ নিচ্ছি।
সুনামগঞ্জে গত ১৫ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাপক পরিমাণে নামছে উজানের পাহাড়ি ঢল। এতে করে জেলার পাঁচটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা বেশি আক্রান্ত। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে। জেলার সব উপজেলা বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্যার্তদের পাশে আমরা আছি। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছি। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যা আক্রান্ত বেশি। বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো ও রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।