অনেক দিন ধরেই পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করব বলে ভাবছিলাম।তাই একটা ছোট ছেলেকে পড়াতে শুরু করলাম। ছেলেটি ৫ম শ্রেণীতে।ছেলেটির নাম রিফাত।খুবই চালাক আর বুদ্ধিমান একটি ছেলে।ছেলেটির সবচেয়ে ভালো যে গুণটা তা হলো কোন কিছু সম্পর্কে জানার প্রচুর আগ্রহ। এতো ছোট একটি ছেলে কিন্তু জানার আগ্রহ দেখে আমি অনেক আবাক হয়ে যাই।রিফাতের এই জানার আগ্রহের কারণে খুব কম সময়ের মধ্যেই আমার সাথে রিফাতের একটা বন্ধুত্ব সুলভ সম্পর্ক হয়ে যায়।এতে আমার পড়াতে খুবই সহজ হয়ে যায়। বইয়ের বাহিরেও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। আর রিফাতের শেখার আগ্রহ যেন আরও বেরে যেতো। আমি প্রতিদিন বিভিন্ন ম্যগাজিন,খবরের কাগজের বিভিন্ন অংশ এমন কি লাইব্রেরি থেকে বিভিন্ন বই ও নিয়ে গিয়ে দিতাম।আর রিফাত ঐসব পড়তো।মাঝে মাঝে তার অর্জিত জ্ঞান গুলো ব্যাবহারিকভাবে পরীক্ষাও করতো।রিফাতের এসব কাজ দেখে আমার মনে হতো রিফাত নিশ্চয় বড় হয়ে একজন বিজ্ঞানী হবে ।এভাবেই চলছিল আমার শিক্ষাকতা।
সামনে রিফাতের ১ম সামরিক পরীক্ষা ।একদিন পড়ানো শেষে রিফাতের মা আমায় ডেকে বলল রিফাত কেমন পড়ালেখা করছে।আমি বললাম অনেক ভালো ।আর রিফাতের জানার ইচ্ছা, শেখার আগ্রহ এতো বেশী দেখবেন রিফাত জীবনে একদিন অনেক বড় হবে।আমার কথা শুনে রিফাতের মা ও অনেক খুশি হলো।আর বলল আপনি পড়ানোর পর থেকে রিফাতের পড়াশোনার উপর আগ্রহ অনেক বেশী বেরে গেছে কিন্তু ইদানীং ক্লাসের বই গুলো ছেড়ে কি যেন সব অন্য বইগুলো পড়ে ।এসব বই পড়লে কি হবে বলেন ।
রিফাতের মার এই কথার অর্থ কিছু বুঝলাম না।শুধু বললাম যতো বেশী বই পড়বে ততবেশীই জানতে পারবে।
আপনি শিক্ষক আপনাকে তো কিছু বলার নাই।একটু বইয়ের পড়া গুলো পড়ালে ভালো হতো ।বুজতেই তো পারছেন রিফাতের সামনে বোর্ডের পরীক্ষা জীবনের প্রথম বোর্ডে পরীক্ষােদবে আমার ছেলেটা।
হ্যাঁ, ঠিক আছে ।
পরদিন থেকে শুধু বইয়ের পড়াগুলো পড়াতে শুরু করলাম। কিন্তু সে সব নিয়ে বইয়ের বাহিরেও রিফাতের নানা প্রশ্ন। যেন কিছুতেই বইয়ের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকতে চায়।সব টা ঠিক রেখে রিফাতের ১ম সামরিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো।
একদিন পড়ানো শেষ করে বের হতেই রিফাতের মা ডেকে বলল আজ রিফাতের পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। আমি গিয়ে নম্বর পত্র টা হাতে নিয়ে দেখি ৮৫’/. নম্বর রিফাত পেয়েছে।
আমি কিছু বলার আগেই রিফাতের মা বলল দেখছেন কি রেজাল্ট করছে মাত্র ৮৫’/. নম্বর পেয়েছে ।যেখানে এর আগে ৯০’/. নম্বর পেয়ে ৪র্থ থেকে ৫ম শ্রেণীতে উঠেছে ।আর এবার সেখানে মাত্র ৮৫’/. তাছাড়াও একটা বিষয়ে ৮০ ও নিচে পাইছে ।এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে হয়তো দেখা যাবে এবার গোল্ডেন তো দূরে থাক A+ ও পাবে না ।
কথা গুলো শুনে একদম চুপ হয়ে গেলাম ।কি বলব বুজে উঠতে পারছিলাম না। A+ বা গোল্ডেন কি কখনও কোন ছেলে মেধার মানদন্ড হতে পারে ।যদি একটা পরীক্ষার ফলাফল যদি জীবনের মানদন্ড হয় তবে রবীন্দ্র নাথ স্কুল ফাকি দিয়ে কিভাবে বিশ্ব কবি হলো কাজী নজরুল কিভাবে পড়াশোনা না করেই জাতীয় কবি হতে পারে ।একজন ছাত্রকে তবে কেন গোল্ডন বা A+ এর পেছনে ছুটতে হবে । শিক্ষাটাশেখার জন্য না হয়ে কেনো তবে তা A+ এর জন্য হবে ।
যখন আমরা আমাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভাবি তখন ভাবি হয় সে ডাক্তার হবে না হয় Engineer হবে আপনার সন্তান যদি খুব বড় বিজ্ঞানী বা কোন খেলোয়াড় হয় তবে কি আপনার গর্ব কম হবে ।
হবে না বরং অনেক বেশী গর্ব হবে ।কিন্তু সে সব কথা কখনও কেও ভেবেও দেখে না ।
এসব ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিলাম রিফাতকে আর পড়াব না কাল পড়ানোর পর পড়াব না বলে আসব । কালই রিফাতকে আমার শেষ পড়ানো।
কয়েক মাসে পড়াতে পড়াতে রিফাতের সাথে অনেক সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে ছিল কালকের পর আর পড়াতে যাবনা।
পরের দিন পড়াতে গিয়ে দেখি রিফাত একটা রেডিও নিয়ে নাড়াচাড়া করছে ।আমি যাওয়া সাথেই রিফাত বলল স্যার বলেন তো রেডিও কে আবিষ্কার হইছে বলেন তো ।আমি বললাম টমাস আলভা এডিসন ।তখন রিফাত বলল আমিও এডিসনের মতো বড় বিজ্ঞানী হবো ।এই সময় রিফাতের মা ঘরে নাস্তা দিতে এসে রিফাতের কথা শুনে বলল তাহলে তোমাকে অনেক পড়তে হবে পড়াশোনা করে A+ পেতে হবে তখন রিফাত আমাকে জিজ্ঞাসা করল এডিসন কি সব সময় A+ পেতো।
আমি বিষন্ন হয়ে বললাম না টমাস আলভা এডিসন ছোটবেলায় পড়াশোনাতে এতো খারাপ ছিল যে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হইছিল ।আর তাকে বের করে দেওয়ার নোটিশ স্কুল থেকে তার মাকে পাঠালো তখন টমাস আলভা এডিসনের মা তাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করে দেয় তখন তার মা তাকে বলে ঐ স্কুলটা তোমার যোগ্য না ।এই কথা বলে যাতে তার মনোবল ভেঙে না যায় ।
এই কথা বলে বললাম আজ আর তোমায় পড়াব না ।এরপর রিফাতের মাকে বললাম আমার একটা নতুন চাকরি হইছে মাসও তো শেষ আমি আর রিফাত কে পড়াব না ।আর পরলে রিফাত কে A+ এর নেশায় ডুবিয়ে রাখবেন ।
লেখা : তুষার চৌধুরী
পাঠক আপনিও চাইলে লিখা দিতে পারেন, শেরপুর টাইমস ডট কমের মুক্ত মত বিভাগে।
লিখে পাঠান আপনার লিখা news@sherpurtimes.com এই মেইলে।