নিয়োগ বাণিজ্য ঠেকাতে বাড়ছে পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা। এবছর পুলিশের কনস্টেবল পদে বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম রোধে পাঁচ স্তরের গোয়েন্দা তৎপরতা নেওয়া হয়েছে। নিয়োগে কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের হুঁশিয়ারি করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। সেই সঙ্গে আইজিপির নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজির নজরদারি কমিটি, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রতি জেলায় কমিটি, মিডিয়া শাখার কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট জেলায় গঠন করা কমিটি নিয়োগ বাণিজ্য রোধে কঠোর তৎপরতা চালাচ্ছে। ফলে চলতি বছর কনস্টেবল নিয়োগে বাণিজ্যের ঘটনা অনেক কমে এসেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে পুলিশের এক এসআইকে গ্রেপ্তার এবং এক কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের তদবির প্রার্থীদের অযোগ্যতা বিবেচিত হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২২ জুন থেকে শুরু হওয়া ৯ হাজার ৬৮০ জন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ শেষ হবে ৯ জুলাই। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮০০ জন পুরুষ ও ২ হাজার ৮৮০ জন নারী। প্রতিটি জেলার পুলিশ লাইনস মাঠে প্রার্থীদের বাছাই করা হবে। শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। পরে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, কনস্টেবল নিয়োগে কোনো ধরনের ঘুষ এবং অনিয়ম বরদাস্ত করা হচ্ছে না। আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। আমাদের কাছে কিছু অভিযোগ আসছে। যেখানে অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তদবিরবাজের পাশাপাশি পুলিশের কেউ নিয়োগ বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রতিটি জেলায় একজন এসপি এবং অতিরিক্তি এসপির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট জেলায় কনস্টেবল নিয়োগের আগে এসে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষঅবধি থাকবেন। রেঞ্জের ডিআইজি জেলায় কনস্টেবল নিয়োগে কমিটি করে দিয়েছেন। আইজিপির নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা তৎপরতা চালাচ্ছেন। এছাড়া মিডিয়া শাখা তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সহযোগিতা করছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, আইজিপি পুলিশ সদর দপ্তরে বৈঠক করে রেঞ্জ ডিআইজি ও এসপিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রার্থীদের কাছ থেকে কোনোভাবেই ১০৩ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। নির্দেশনা পেয়ে বেশির ভাগ জেলার এসপি সরকারি ফি ১০৩ টাকা ছাড়া প্রার্থীদের আর কোনো টাকা লাগবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্য কিংবা বেশি টাকা দাবি করলে পুলিশ সদর দপ্তর, রেঞ্জ ডিআইজি, এসপি কার্যালয় বা থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তিনি এসপি হলেও তাকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করবে পুলিশ সদর দপ্তরের তদারকি টিম। নেতাদের তদবির এলে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তদবির সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষ লেনদেন, অনিয়ম ও তদবির হয় বেশি। কনস্টেবল নিয়োগের অধিকর্তা হলেন জেলার এসপি। প্রায় প্রতিটি জেলার রাজনৈতিক নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপিসহ আমলারাও তদবির করেন পুলিশের কাছে। এছাড়া একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যও নিয়োগে তদবির চালান। কিছু এসপি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কনস্টেবল নিয়োগ দিয়ে থাকেন। অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতেই পুলিশ সদর দপ্তর এবার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ কারণে পাঁচ স্তরের পুলিশের তৎপরতার মাধ্যমে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইলে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলী ও শাহানাতুল আরেফিন সুমি নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ। শনিবার আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে। এসআই মোহাম্মদ আলী জামালপুর আদালতে কর্মরত। তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের মৃত ইনছান আলীর ছেলে। সুমি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক অন্য দিগন্ত পত্রিকার প্রতিবেদক খায়রুল বাশারের স্ত্রী। এছাড়া শনিবার পুলিশ নিয়োগে তদবির করতে গিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের কনস্টেবল আবদুল হাকিম সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। তিনি মহেশপুর থানায় কর্মরত ছিলেন।