স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার পুলিশসহ সাধারণ মানুষের ওপর বিএনপির হামলাকে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ইসরাইল যেভাবে হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে-বিএনপির ক্যাডাররাও সেভাবে পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের প্রধান ফটকে হামলা করেছে। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। একাধিক পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা করেছে। সাধারণ মানুষের ওপরও হামলা হয়েছে। সভ্য সমাজে এমন তাণ্ডব কেউ কখনো দেখেনি।
রোববার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল আরও বলেন, আমরা বিএনপিকে বলেছিলাম খোলা মাঠে সমাবেশ করতে। তারা তাদের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে-এ প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আমরা তাদের সেখানে সমাবেশ করতে অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু তারা সমাবেশের নামে তাণ্ডব করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাগে করে ঢিল ও ককটেল নিয়ে এসেছিল। এগুলো বৃষ্টির মতো ছুড়েছে। এতে অন্তত ১০০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এক পুলিশ সদস্যকে ছাত্রদল নেতা পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। আরেকজন পুলিশ সদস্য নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আরও কয়েকজন সদস্য অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন।
এ সময় হামলার বিভিন্ন ছবি সংসদে প্রদর্শন করে তিনি বলেন, এর আগেও আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপিকে এভাবে তাণ্ডব করতে দেখেছি। এবারও তারা সেই পথে হাঁটছে।
এর আগে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পুলিশ, সাংবাদিক ও সরকারি ভবনে হামলা এবং গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে এবং আরও দেওয়া হবে।
বিএনপি বর্বরোচিত ও জঘন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব ঘটনায় আলাদা আলাদা মামলা হবে। স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ মামলা দেবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। বাসভবনে অনুপ্রবেশের মামলা তো হবেই। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, বাসভবনে যারা ঢুকেছে তাদের অবশ্যই আইনের মুখোমুখি করা হবে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার দায় কি তারা এড়াতে পারবে? পুলিশ হত্যার দায় কি তারা এড়াতে পারবেন? পুলিশের তিনটি অস্ত্র তারা ছিনিয়ে নিয়েছে-এর দায় কি তারা এড়াতে পারবে?
কতগুলো মামলা হয়েছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মামলা তো শুরু হয়েছে। মামলা অনেকেই দেবেন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাও মামলা দেবেন। সাংবাদিকরা মামলা দেবেন। পুলিশ হাসপাতাল মামলা দেবে। সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে মামলা দেওয়া হবে।
বিএনপি হরতাল ডাকায় বিস্ময় প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, আহত হলো পুলিশ সদস্য, ক্ষতিগ্রস্ত হলো যানবাহন আর হরতাল ডাকে বিএনপি! এ ঘটনা যারা ঘটাল তারাই আবার হরতাল ডাকে!
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, যারা মিটিং করেছেন, যারা উসকানি দিয়েছেন তারা কি দায় এড়াতে পারবেন? তবে এসব বিচার বিভাগ দেখবে। আমরা আদালতের সম্মুখে তাদের নিয়ে যাচ্ছি।
মির্জা ফখরুলসহ আটকদের সুনির্দিষ্ট কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা মিটিং করছিল। যখন মিটিংয়ে বসেছিলেন তখনই ঘটনাগুলো ঘটেছে। তাহলে এর দায় কি তারা এড়াতে পারবেন? যে ছাত্রদল নেতার আঘাতে পুলিশ সদস্য মারা গেছেন বলে জানা গেছে-তাকে গ্রেফতার করা যায়নি কেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্রেফতার অভিযান চলছে। কিছু ক্যামেরা ভাঙা হয়েছে, কিছু অকার্যকর করে দিয়েছে, এরপরও আমাদের অনেক ধরনের ক্যামেরা ছিল, ক্যামেরার মাধ্যমে আমরা যাদের চিহ্নিত করব তাদের আইনের কাছে সোপর্দ করব।
সাংবাদিকদের ওপর বেপরোয়া হামলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, আমি তো মনে করি আপনারা (সাংবাদিক) সে ব্যাপারে সোচ্চার হবেন। যেসব সাংবাদিক আহত হয়েছেন তারা নিশ্চয়ই সোচ্চার হবেন এবং মামলা দেবেন। আমরা সব মামলা নেব। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি নাশকতা করতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে যা ঘটেছে তা আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকেছে।
জামায়াতের সমাবেশ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, নিবন্ধন না থাকা অনেক দল সভা-সমাবেশ করে। জামায়াতের নিবন্ধন নেই। তাদের পারমিশন দেওয়া হয়নি। তারা অবস্থান নিয়েছিল আমরা কিছু বলিনি। আমরা ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি।