বাংলাদেশ ও ভারতে আইএস-এর হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানালেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শনিবার (১৮ মে) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন বাংলাদেশে আইএস হামলা করবে, সাইট ইন্টেলিজেন্সের করা খবরের সত্যতা নিয়ে অল্প কিছুদিন আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তখন মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ ও কঠোর সমালোচনা করে বলে ছিলেন, এগুলো সব অতিরঞ্জিত প্রচারণা। বাংলাদেশে আইএস হামলা করবে এমন কোন খবরের সত্যতা আমাদের কাছে নেই। এই বক্তব্য দেয়ার কিছু দিনের মধ্যে নিজের বোল পাল্টে ফেললেন তিনি।
সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইএস হামলার আশঙ্কা রয়েছে। এটা উড়িয়ে দেয়ার আর সুযোগ নেই। বিশ্বায়নের যুগে কোন রাষ্ট্রই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বাইরে নয় বলেও জানান তিনি।
আইএস হামলার আশঙ্কায় আপনাদের প্রস্তুতি কেমন রয়েছে? আলোচকের এমন প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আমরা জেনেছি। আমাদের চৌকস গোয়েন্দা সংস্থাও তৎপর রয়েছে। কোনও আশঙ্কাই আমাদের দৃষ্টির বাইরে নয়। সবগুলো বিষয় আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সেজন্যই আমরা অনেকগুলো ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে সফল হয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এখানে আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে একে অপরের ভাইয়ের মতো বসবাস করছি।
আপনার জেনে খুশি হবেন, বুদ্ধ পূর্ণিমা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনে সব ধরনের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, শনিবার (১৮ মে) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বুদ্ধপূর্ণিমা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তারা পালন করতে পারেন তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। দেশে প্রায় আড়াই হাজার বৌদ্ধমন্দির বা প্যাগোডা রয়েছে। সেগুলোর নিরাপত্তার জন্য আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী নিরলস ভাবে কাজ করছে। আমরা কোনও আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছি না। সব আশঙ্কার বিষয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকা শহরে যে চারটি মন্দির বা প্যাগোডা রয়েছে সেখানে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা রয়েছে, নজরদারি রয়েছে। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকেন। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের অনুষ্ঠানগুলো যেখানে হবে, সেখানে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভলান্টিয়ার রাখার কথা বলা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা সেখানে স্থাপন করতে বলেছি। আমাদের পুলিশও সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করেছে। আশা করি যে আড়াই হাজার মন্দির বা প্যাগোডা রয়েছে সেখানে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারবেন। সেজন্য আমরা সব সময় সচেষ্ট রয়েছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইএস নাম টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল নিচ্ছে। এই এলাকায় নতুন ধরনের কর্মকাণ্ড চালাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। হলি আর্টিজানের পর শোলাকিয়া, আশুলিয়া, বান্দরবান, কল্যাণপুরে একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। তখন প্রধানমন্ত্রীর ঘুরে দাঁড়ানোর ডাকে পেশাজীবী, শ্রমিক, মসজিদের ইমাম থেকে আরম্ভ করে সবাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে যারা নিহত হয়েছিল তাদের স্বজনরাও কিন্তু লাশ নিতে অস্বীকার করেছে। এ থেকেই প্রমান হয় আমাদের দেশের মানুষ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পক্ষে নেই।
আমি মনে করি, কিছু দুষ্কৃতিকারী ইসলামকে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে যাতে ইসলামের মতো আধুনিক শান্তি পূর্ণ ধর্মের কপালে কালো দাগ পড়ে। সমগ্র বিশ্বে যাতে করে মুসলমানদের ভাবমূর্তি তলানিতে চলে যায়। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে তা গুটিকয়েক মুসলিমরা বুঝতে পাচ্ছে না। ইসলামে বিশৃঙ্খলার কোন স্থান নেই। শান্তির ধর্ম ইসলামে কোনও খুন-খারাবির স্থান নেই।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে রাজধানীর গুলিস্তানে বোমা বিস্ফোরণে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিল। তখন সাইট ইন্টেলিজেন্স দাবি করেছিল এই হামলা আইএস করেছে এবং বৌদ্ধ পূর্ণিমার দিনে হামলা হবে। সেই সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হামলার কোন আশঙ্কা নেই। এগুলো অপপ্রচার। তবে গত রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই হামলার আশঙ্কার কথা জানালেন।