সকাল থেকেই কামারের চর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে শত শত শিক্ষার্থী উপস্থিত। প্রখর রোদের মধ্যেও তারা সুশৃংখলভাবে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আবার অনেকে চেয়ারেও বসে আছে। তারা অপেক্ষা করছে কখন ডিসি সাহেব, জেলা ও উপজেলা চেয়ারম্যান আসবেন এবং তাদের হাতে স্কুল ব্যাগ ও ছাতা তুলে দেবেন।
লাইনে দাঁড়ানো কামারের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী লামিয়াকে প্রশ্ন করা হলো, তুমি কেন এখানে এসেছে? চটপটে মেয়েটির তাৎক্ষণিক উত্তর ‘আইজ আমগরে ইস্কুলে ডিসি সাহেব, চেয়ারম্যান সাহেবরা আইবো। আমগরে ব্যাগ আর ছাতা দিব। আমার খুব ভালা লাগতাছে। ব্যাগ ছাড়া ইস্কুলে বই আনতে খুব কষ্ট হয়। বৃষ্টি আর রইদে ইস্কুলে আবার পারিনা। ছাতা পাইলে খুব ভাল হবো। অহন থেইক্কা রুজ ইস্কুলে আসমু। ’
সন্নাসীর চর দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মাধবী আক্তার জানায়, “ইতোপূর্বে স্কুলে টিফিন খাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান আমগরে টিফিনবক্স দিছেন। আইজ ছাতা আর স্কুল ব্যাগ দিব। আমরা খুব খুশি । আগে ইস্কুলে আইতে মন চাইতো না। অহন রুজ ইস্কুলে আসমু।”
১৫ জুলাই শনিবার দুপুরে কামারের চর ইউনিয়নে প্রত্যন্ত পল্লীর শিক্ষার্থীদের স্কুলগামী করতে বিশেষ উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্কুল ব্যাগ ও ছাতা বিতরণের আয়োজন করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বরে বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন। ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রুমান, উপজেলা চেয়ারম্যান মো ছানুয়ার হোসেন ছানু, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহম্মেদ, ইউএন মো. হাবিবুর রহমান প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ধৈয্য ও সহনশীলতা না থাকলে বড় হওয়া যায়না। তিনি বলেন, শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকার জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করছে। তোমরা মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর। দেশ ও দশের উন্নতি করতে হলে লেখাপড়া ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই। এদিন ওই ইউনিয়নের কামারের চর উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা ও সন্নাসীর চর দাখিল মাদ্রাসার ৮ শত শিক্ষার্থীকে সদর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি করে ছাতা ও স্কুল ব্যাগ ও এক প্যাকেট করে খাবার প্রদান করা হয়। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৬ জন হতদরিদ্রকে ঘর করার জন্য ২ বান্ডিল করে ঢেউটিন, আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষে ১০জন নারীকে একটি করে সেলাই মেশিন, এবং বিদ্যালয়ের জন্য ২০টি ফ্যান প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর একটি মডেল ইউনিয়ন। এক সময় এ ইউনিয়নের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী আসতো না। ছেলেবেলা থেকেই দরিদ্র বাবা-মা তাদের সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগিয়ে দিত। ৬ বছর আগে প্রথমবারের মত কামারের চর ইউপি’র চেয়ারম্যান হওয়ার পর মো. হাবিবুর রহমান এর বিশেষ উদ্যোগে এ ইউনিয়নের শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। ঝরে পড়ার হার নেই বললেই চলে। ইউনিয়নটিকে বাল্য বিয়ে মুক্ত ঘোষনা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কামারের চর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন আন্তরিকতা থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব তাঁর উদাহরণ হচ্ছে কামারের চর ইউনিয়ন। তিনি বলেন, আমি দু’বার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হয়ে পুরস্কারের টাকার সাথে আরও কিছু টাকা যোগ করে ইউনিয়নের সকল শিক্ষার্থীদেও টিফিন বক্স, ছাতা ও স্কুল ব্যাগ দিয়েছি। বেশ কয়েকটি স্কুলে স্থানীয়ভাবে মিডডে মিলের কর্মসূচী চালু রয়েছে। ঝড়ে পড়ার হার আগামী বছর শূণ্যের কোঠায় আনা হবে। বেশ কয়েকমাস আগে এ ইউনিয়নকে বাল্য বিয়ে মুক্ত করা হয়েছে।