আজ ঐতিহাসিক ৭ ডিসেম্বর শেরপুরের নালিতাবাড়ী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে পাক হানাদার বাহিনীদের পরাস্ত করে নালিতাবাড়ীকে দখল মুক্ত করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি জনপদ নালিতাবাড়ীতে দুইদিন দুইরাত সরাসরি যুদ্ধের পর মুক্তির এই দিনটি এলাকার মানুষের স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে আছে আজও। এদিন পাক হানাদার বাহিনী বর্তমান উপজেলা পরিষদ, রামচন্দ্রকুড়া ফরেষ্ট অফিস, হাতিপাগার বিডিআর ক্যাম্প তিনআনী বাজার ও ঝিনাইগাতির আহাম্মদ নগরে শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করে।
দীর্ঘ ৯ মাসে নাকুগাঁও (বর্তমান স্থলবন্দর) ঢালু সীমান্তে ২৫ মে ভোরে পাকিস্তানি হায়েনার দল অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৯ জন ভারতীয় বিএসএফ সহ কয়েকশ বাংলাদেশিকে হত্যা করে পাশের ভোগাই নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
৩০ জুন তন্তর গ্রামের ৭ জনকে হত্যা করে। এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার অপরাধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে অর্ধশতাধিক মানষকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী।
নন্নী-বারমারী সড়কে একজন ক্যাপটেনসহ ৬ জন সৈন্য জীপ দিয়ে যাওয়ার সময় মাইন বিস্ফোরণে পাক বাহিনী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। শেষে কৌশল পরিবর্তন করে নালিতাবাড়ী থানা সদরে রাজাকার আল বদরদের সহায়তায় শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে।
২৫ জুলাই উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৮৭ জন নারী-পুরুষ শিশু সহ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
১ ডিসেম্বর এই ঘাঁটি থেকে শত্রু মুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা অভিযান চালালেও সফল হতে পারেনি। বরং হাছেন আলী মুন্সি, আয়াত আলী নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত বরন করেন। রাজাকার আলবদররা এই দুই বীরের মৃতদেহ নিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠে। তাদের পায়ে রশি বেধে টেনে হিঁচরে শহরের অদূরে মাটি চাপা দেয়।
৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে পূর্ণরায় ক্যাম্প দখলের লড়াই শুরু হয়। এ লড়াইয়ে মিত্রবাহিনীর একটি ও মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দল অংশগ্রহণ করে। টানা দুইদিন দুইরাত গুলিবর্ষণের পর ৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমান দিয়ে বোম্বিং করার পরিকল্পনা করে। এতে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির কথা চিন্তা করে সে পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা আক্রমণ শিথিল করে দেয়। এ সময় ক্যাম্পের আলবদর, রাজাকাররা পালিয়ে যায়। সারারাত কোন সাড়া শব্দ নেই। আতঙ্কগ্রস্ত এলাবাসী অপেক্ষা করতে থাকেন কখন ভোর হবে।
অবশেষে ৭ ডিসেম্বর পূর্বদিগন্তে সূর্যের লাল আভা ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিযোদ্ধারা জয়বাংলা, জয়বাংলা স্লোগানে মুখরিত করতে করতে এলাকায় ঢুকতে থাকে। ক্রমেই স্লোগানের আওয়াজ স্পষ্ট হয় কেটে যায় শঙ্কা। মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে, কণ্ঠ মিলিয়ে মুক্তির উল্লাসে মেতে উঠে সবাই। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীরা এগিয়ে যায় সামনের দিকে পিছু হটে হানাদার বাহিনী মুক্ত হয় নালিতাবাড়ী। পতপত করে উড়তে থাকে লাল সবুজের পতাকা স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।