জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় মালপাড়া খালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সংযোগ সড়কবিহীন একটি ব্রিজ। সংযোগ সড়ক না থাকায় নির্মাণের অন্তত ৩৬ বছরেও কাজে আসছে না ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের নির্মিত ওই ব্রিজটি।
ফলে ব্রিজটির ওপর দিয়ে পারাপার হতে পারছেন না আশেপাশের অন্তত দশ গ্রামের মানুষ। এতে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। বছরের পর বছর ধরে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলেও দেখার কেউ নেই।
স্থানীয়দের দাবি, অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেনো ব্রিজটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করে দিবেন।
জানা গেছে, উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের গাইবান্ধা সুরুজ্জাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে নাপিতেরচর-মালপাড়া রাস্তায় মালপাড়া খালের ওপর প্রায় ৩৬ বছর আগে নির্মাণ করা হয় একটি ব্রিজ। নির্মাণের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ব্রিজটির উভয় পাশে সংযোগ সড়ক এখনো নির্মাণ করা হয়নি। তবে ব্রিজটি কখন নির্মাণ করা হয়েছে, তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি উপজেলা এলজিইডি বিভাগ থেকে।
সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজটির ওপর দিয়ে পারাপারে গাইবান্ধা সুরুজ্জাহান উচ্চ বিদ্যালয়, নাপিতেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং গাইবান্ধা কাছিমূল উলূম কওমি হাফিজিয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এক কিলোমিটারের পথ ঘোরপথে অন্তত তিন থেকে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এছাড়া নাপিতেরচর, মরাবন, মালপাড়া, ডাকপাড়া, আদর্শগ্রাম, চন্দনপুর, ফুলারচরসহ আশেপাশের দশটি গ্রামের মানুষের গাইবান্ধা গো-হাটসহ এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে আসা-যাওয়া করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গাইবান্ধা সুরুজ্জাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিজান, হাসমত আলী, মিল্লাত সরকার, আবির মিয়া, সুজন যৌথভাবে জানান, ‘খালের ওপর ব্রিজ থাকলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজটি কাজে আসছে না।’
নাপিতেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমন মিয়া, আবেদা পারভীন, নূপুর আক্তারসহ অনেকেই জানায়, ‘ব্রিজের সংযোগ সড়ক না থাকায় মাত্র এক কিলোমিটারের রাস্তা ঘুরপথে প্রায় চার কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।’
গাইবান্ধা কাছিমূল উলূম কওমি হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী আব্দুল খালেক, আবুল কালাম, বিল্লাল হোসেনসহ আরো অনেকেই জানায়, ‘মালপাড়া খালের ওপর নির্মিত ব্রিজের সংযোগ সড়ক না থাকায় মাদরাসায় যাতায়াত করতে হচ্ছে ঘুর পথে। বিশেষ করে বন্যা মৌসুমে চলাচলের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।’
গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ মাহমুদ মিয়া জানান, ‘১৯৮৫ সালে আমি ইউপির চেয়ারম্যান থাকাকালীন ব্রিজটি নির্মাণ করে এলজিইডি বিভাগ। ৩৬ বছরেও ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় পারাপার হতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাইকেল, মোটরসাইকেল ও মালবোঝাই ভ্যান গাড়ি তো দূরের কথা, ব্রিজটির ওপর দিয়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না। সংযোগ সড়কবিহীন সরু এই ব্রিজটি পারাপারে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।
গাইবান্ধা সুরুজ্জাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন জানান, ব্রিজটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজ দিয়ে শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণের চলাচল করা খুবই কষ্টসাধ্য। দ্রুত ব্রিজটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা প্রয়োজন।
গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করবেন এমনটি প্রত্যাশা করি।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল হক জানান, ব্রিজটির উভয় পাশে সংযোগ রাস্তা না থাকার বিষয়টি জেনেছি। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, ৩৬ বছর আগে নির্মিত ব্রিজের সংযোগ সড়ক না থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
#ডেইলি বাংলাদেশ