বছরের শুরুতে ঘোরাঘুরি করার ঝোঁক থাকে অনেকের। কম-বেশি সবাই বছরের ছুটিগুলোকে কাজে লাগিয়ে মনটাকে উৎফুল্ল করার চেষ্টা করেন। ২০২০ সালে পরিকল্পনা ঘুছিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দক্ষিণবঙ্গ থেকে। দেশের যেকোনো জায়গা থেকে সড়ক ও নদীপথে যেতে পারবেন। জেনে নিন দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ ভ্রমণ গন্তব্য সম্পর্কে-
দূর্গাসাগর
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশার দূর্গাসাগর দিঘি এখনো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের নজর কাড়ে। অনেকেই নগর জীবনের কোলাহল আর জঞ্জাল থেকে সাময়িক মুক্তি জন্য এখানে এসে ভিড় করেন। বিশাল এ দিঘির মধ্যস্থানে তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম দ্বীপ। এখানে এসে অতিথি পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেন। তবে প্রাকৃতিক আবহাওয়ার কারণে গত কয়েক বছর ধরে পাখিদের আগমন অনেকটাই কম।
প্রায় ৭৭ একর জমি নিয়ে দূর্গাসাগর দিঘিটি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত একটি বদ্ধ জলাশয়। ১৯৭৪ সালে দিঘিটি পুণঃখনন করে বর্তমান রূপ এনে দেয়া হয়েছে। দিঘির মাঝে থাকা কৃত্রিম দ্বীপটিও সে সময়কার। দিঘিটি খনন করতে গিয়ে সেসময় উদ্ধার হয়েছিল বিশালাকৃতির ঘোড়ার কষ্টি মূর্তি। সেটি বর্তমানে বরিশাল জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৯৮-৯৯ সালে দিঘির সীমানা নির্ধারণ করে প্রাচীর ও গেট নির্মাণ করা হয়।
সুন্দরবনের করমজল
একদিনে যারা সুন্দরবন ঘুরতে চান তাদের জন্য করমজল আদর্শ জায়গা। সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীনেই এই পর্যটন কেন্দ্রটি। মংলা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়লে করমজলের জেটিতে পৌঁছা যাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টায়। পর্যটন কেন্দ্রটির শুরুতেই বিশাল আকৃতির মানচিত্র সুন্দরবন সম্পর্কে সাম্যক ধারণা দেবে। মানচিত্র পেছনে ফেলে বনের মধ্যে দক্ষিণে চলে গেছে আঁকাবাঁকা কাঠের তৈরি হাঁটা পথ। যার নাম মাঙ্কি ট্রেইল।
করমজলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। সেটার উপরে উঠে সুন্দরবনের উপরিভাগের সবুজাভ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। এখানকার কাঠ বিছানো পথটা খুবই পরিচিত। এর দুই ধারে ঘন জঙ্গল। দুই পাশে বাইন, কেওড়া আর সুন্দরী গাছের সারি।
কুয়াকাটা সৈকত
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকটা।এটি পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। সমুদ্রের পেট চিরে সূর্য উদয় হওয়া এবং সমুদ্রের বক্ষে সূর্যকে হারিয়া যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করা নিঃসন্দেহে দারুণ ব্যপার।
কুয়াকাটা থেকে ফাতরার চরের দিকে যেতে হাতের ডান পাশে পড়বে লাল কাঁকড়ার দ্বীপ। সেখানে ভোরে গেলে লাল কাঁকড়ার মিছিল দেখতে পাবেন। এছাড়া গঙ্গামতি চরের পূর্ব পাশেও লাল কাঁকড়া অবাধে ঘুরে বেড়ায়। মনে রাখবেন সূর্যের তাপে বালু উত্তপ্ত হয়ে গেলে কাঁকড়াগুলো বাইরে বের হয়ে আসে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি জায়গা আছে কুয়াকাটায়।
রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ি। কবির জীবন ও সাহিত্যের অনেক কিছুই এই বাড়ির সঙ্গে জড়িত। বাড়িতে প্রবেশ করতেই পাবেন আম, কাঁঠাল, জাম, জামরুল ও তালগাছের শীতল ছায়া। আর ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখতে পাবেন রবি ঠাকুরের ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র। সেখানে আরো আছে সেই সময়ের দুর্লভ ছবি, পালকি, পালঙ্ক, তিনি যে নৌকায় চড়ে পদ্মায় ঘুরতেন সেই নৌকাসহ অনেক কিছু।
পদ্মা নদীর ঢেউয়ের আকৃতির প্রাচীর বেষ্টিত তিনতলার পিরামিড বাড়িটির দিকে দূর থেকে তাকালে মনে হবে, অসাধারণ একটি প্রতিকৃতি যেন কাগজ দিয়ে তৈরি। বাড়িটির চারপাশে রয়েছে সবুজ ঘাসের গালিচা, তার ওপর নানা রঙের ফুল গাছের সমারোহ। আর সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয়া ঝাউ গাছ, সেই সঙ্গে পাখির কলতান, আশপাশের প্রাকৃতির সৌন্দর্য যে কোনো পর্যটককে মুগ্ধ করবে।
ষাটগম্বুজ মসজিদ
বাগেরহাট পুরো জেলাই ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট। যেখানে আছে ১৫ ও ১৬ শতাব্দীর অসংখ্য মসজিদ। এর মধ্যে ‘ষাটগম্বুজ মসজিদ’ অন্যতম। বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোকিটার দূরের সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত ষাটগম্বুজ মসজিদটি। উপমহাদেশের বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক খান জাহান আলী নির্মিত মসজিদটির নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।
মসজিদে প্রবেশের প্রধান ফটকের ডান পাশে রয়েছে বাগেরহাট জাদুঘর। এখানে প্রাচীন মুদ্রা, পোড়ামটির ফলকসহ খানজাহান আমলের অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। আছে খানজাহানের দিঘির ঐতিহ্যবাহী ‘কালা পাহাড়’ ও ‘ধলা পাহাড়’ কুমিরের মমি।