সৈয়দা উম্মে কুলছুম রেনু; শেরপুরের নকলা উপজেলার আওয়ামী লীগ নেত্রী। উপজেলা সদরের ধানহাটি এলাকার অধিবাসী রেনু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে চালানো নারকীয় গ্রেনেড হামলায় আহত নেতা-কর্মীদের একজন। এছাড়া তিনিই ময়মনসিংহ বিভাগের একমাত্র আহত নেতা। লোভ-লালসার উর্ধ্বে থাকা রেনু ওই ঘটনার পর থেকে নিজ শরীরে এখনও স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। তারপরও স্বপ্ন দেখেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গড়তে।
আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় নিহত আইভী রহমানসহ অন্যদের পাশেই গুরুতর আহত, রক্তাক্ত, অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলেন রেনু। কেবল তাই নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ছিলেন মৃতদের সারিতে। ওই সময়কার পত্র-পত্রিকায় মৃতদের সাথে তারও নিথর দেহের ছবি ছাপা হয়। পরে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে এখনও নরক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২ দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা এফডিআর হিসেবে অনুদান দেয়া হয় রেনুকে। সেই টাকার লভ্যাংশের পুরোটা গত ২০২০ সালে জেলা প্রশাসকের করোনা প্রতিরোধ সহায়তা তহবিলে দান করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
নকলা উপজেলা পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান রেনু বর্তমানে নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রেনেড হামলায় আহত এবং স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো প্রসঙ্গে উম্মে কুলসুম রেনু ২০ আগস্ট শনিবার বলেন, গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাত পাওয়ায় এখনও মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। শরীরে অসহ্য যন্ত্রণার পাশাপাশি ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না। তিনি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিয়ে কোনোমতে দিন পার করছেন। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হয়েছে। অপেক্ষায় আছি সেই রায় কার্যকরের। মারা যাওয়ার আগে বিচারের রায় কার্যকর দেখে যেতে চাই।
রেনু বলেন, ওই হামলা ছিল জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের পরিকল্পিত হামলা। ২১ আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলার শিকার হই, তখন আমি ছিলাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আইভী আপা আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তার সাথে সাথেই থাকতাম। হামলায় আইভী আপা শহীদ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আল্লাহর অশেষ রহমতে সেদিন হামলা থেকে বেঁচে যান। আমি ওই হামলায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছি।
হামলার ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রেনু বলেন,
ভয়ঙ্কর ছিল সেই হামলা। আমি মঞ্চের কাছেই বসে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ, চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। চিৎকার, চেঁচামেচি। আমার দুই চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। তারপরই চোখেমুখে অন্ধকার। এরপর আর আমার কিছু মনে নেই। তখন আমি কোমায় ছিলাম। ১৪ দিন পর ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে আমার জ্ঞান ফিরে আসে। কিন্তু আমার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছিল। কিছুই মনে করতে পারিনি। মাথায়-পায়ে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার ঢুকে গিয়েছিল। অপারেশনের পর সাভারের সিআরপিতে ৮ মাস ছিলাম। তারপর কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি।
রেনু আরও বলেন, আমার পায়ে এখনও ৭টি স্প্লিন্টার রয়েছে। অসহ্য সে যন্ত্রণা। যত দিন বাঁচব, এ নরক যন্ত্রণা নিয়েই বাঁচতে হবে। সেইসাথে অনবরত চিকিৎসা নিয়েই বাঁচতে হবে। এজন্য মাঝেমধ্যেই তাকে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। তিনি আরও বলেন, যেদিন গ্রেনেড হামলার রায় হয়েছে, সেদিন অঝোরে কেঁদেছি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এখন বিচারের রায় কার্যকর দেখে মরতে চাই।
রেনু জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছেন এবং তার কারণেই আমরা এখনও বেঁচে আছি,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রেনু। এছাড়া তিনি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শহীদ আইভী রহমানসহ নিহত সকলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।