তরুণ সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন (২১) হত্যার ১০ দিন পরও উদঘাটন হয়নি রহস্য। সেইসাথে উদ্ধার হয়নি ফাগুনের সাথে থাকা ল্যাপটপ, মোবাইল ও মানিব্যাগ। এ নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীসহ সচেতন মহলে অসন্তোষ বাড়ছে। ইতোমধ্যে তারা রেলওয়ে পুলিশের সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে ৩০ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে তরুণ সাংবাদিক ফাগুন হত্যার প্রতিবাদে এবং ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনসহ জড়িতদের বিচার দাবিতে শেরপুর প্রেসক্লাব ঘোষিত ৫ দিনব্যাপী কর্মসূচির শেষ দিনে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা কালেক্টরেট ভবন অঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে প্রেসক্লাব সভাপতি শরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, সহ-সভাপতি এসএম শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, সিনিয়র সদস্য দেবাশীষ ভট্টাচার্য প্রমুখ। পরে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী বরাবর পৃথক দু’টি স্মারকলিপি তুলে দেন সাংবাদিক নেতারা। ওইসময় সাথে ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরু।
স্মারকলিপিতে ফাগুন হত্যার তদন্তে রেলওয়ে পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে তদন্ত পিবিআই বা সিআইডি পুলিশের কাছে দিতেও দাবি করা হয়। ওইসময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিক ফাগুন হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তার পরিবারসহ গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। ওই বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদানকালে জেলা সদরসহ উপজেলা থেকে আগত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জামালপুর রেলওয়ে পুলিশের এসআই রকিবুল হক বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক ফাগুন হত্যা মামলায় রহস্য উদঘাটনসহ তার সাথে থাকা ল্যাপটপ, মোবাইল ও মানিব্যাগ উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে ওই মামলায় রফিকুল ইসলাম পাঙ্খা নামে এক অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও ফাগুনের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাপস চন্দ্র পন্ডিত একই তথ্য জানিয়ে বলেন, সাংবাদিক ফাগুন হত্যা রহস্য উদঘাটনে রেলওয়ে পুলিশ আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকার অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রিয় ডটকমের সাবেক সাব-এডিটর, তেজগাঁও কলেজের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, শেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক কাকন রেজা’র জ্যেষ্ঠ পুত্র ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন গত ২১ মে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে ল্যাপটপসহ জামালপুরে ফিরছিলেন। পরে ওই দিন রাতেই জামালপুরের নান্দিনার রানাগাছা নামক এলাকায় রেললাইনের পাশে তার লাশ পাওয়া যায়। পরদিন বিকেলে রেলওয়ে পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে তার লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে শনাক্ত করেন তার পিতা। তার মাথায় ও গলায় রক্তাক্ত জখম পাবার পরও ওই ঘটনায় নেওয়া হয় একটি অপমৃত্যুর মামলা। এরপর ২৫ মে ফাগুনের বাবা বাদী হয়ে জিআরপি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।