মুজিব শতবর্ষে শেরপুরে হিজড়া জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে মতবিনিময় সভা করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নে হিজড়াদের জন্য গড়ে তোলা আন্ধারিয়া স্বপ্নের ঠিকানা গুচ্ছগ্রামের মুক্তমঞ্চে এ মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ প্রধান অতিথি এবং পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সদর ইউএনও মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন-এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মাঝে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বারি চাঁন, জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি হিজড়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। হিজড়াদের কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বি করতে গুচ্ছগ্রামে গৃহপালিত পশুপালন, হাঁস-মুরগী পালন, শাকসব্জীর আবাদ, পুকুর-বিলে মৎস্য চাষ, মুদি দোকান করা, ইজিবাইক চালনা, সেলাই ও কুটির শিল্পে প্রশিক্ষণ ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ সহায়তা দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে কয়েকজনকে আর্থিক প্রণোদনাও প্রদান করা হয়। পরে হিজড়াদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল-মামুন জানান, অনুষ্ঠানে হিজড়াদের আত্মকর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বীতা অর্জনের জন্য হিজড়া নিশি সরকারকে গরু কেনা বাবদ ৩০ হাজার টাকা এবং মোর্শেদা হিজড়াকে গাভী কেনার জন্য ৩৬ হাজার টাকা নগদ প্রদান করা হয়। এছাড়া স্বপ্নের ঠিকানায় বসবাসকারি হিজড়াদের পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্পের জন্য এককালীণ তহবিল হিসেবে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা এবং ঘুর্ণায়মান তহবিলের ঋণ প্রদানের জন্য আরও ৫ লক্ষ টাকার থোক বরাদ্দ প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। হিজড়াদের বিনোদনের জন্য একটি এলইডি টেলিভিশন প্রদান করা হয়। এছাড়া এখানকার যেকোনো হিজড়া যেকোনো কর্মমুখি উদ্যোগ নিলে জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে এবং সবরকম সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম স্বপ্নের ঠিাকা হিজড়া গুচ্ছগ্রামের সবগুলো ঘরের ভিটি পাকা করে দেওয়ার আশ^াস দেন। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা দু’টি সিলিং ফ্যান প্রদান করেন।
পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী বলেন, সমাজের অবহেলিত একটি জনগোষ্ঠিকে মুলস্রোতে আনতে ভুমিকা পালনের জন্য জনউদ্যোগ কমিটিকে অভিনন্দন জানাই। তারা একটি অসাধ্য সাধন করছেন। তিনি এসব হিজড়াদের প্রতি সদয় হওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা কামনা করেন। হিজড়াদের যেকোন প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, শেরপুরের হিজড়াদের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনা এবং সরকারের কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্তকরনের কাজ করা নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ এবং এবং আহŸায়ক আবুল কালাম আজাদের প্রতি স্যালুট জানাই। আমরা এই হিজড়াদের পাশে আছি, থাকবো এবং তাদের জন্য সম্ভব সবকিছু করবো, যাতে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে এবং অন্যদের মতো তারাও সমাজের মুল¯্রােতের সাথে চলতে পারে। তিনি হিজড়াদের প্রতি সহানুভুতিশীল আচরণ করার জন্য সকলের প্রতি আহŸান জানান।
নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি শেরপুরের হিজড়াদের সংগঠিত করে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনে। এরই ধারাবাহিকতায় শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজার আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর খাসজমির ওপর ওপর ৪০ জন হিজড়াদের বসবাসের জন্য সরকারিভাবে নির্মিত হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠির এ গুচ্ছগ্রাম। গত ৭ জুন ওই গুচ্ছগ্রামে হিজড়াদের পূণর্বাসন করে জমি সহ ঘর হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। গুচ্ছগ্রামে বাসস্থানের সুযোগ পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি, চাঁদাবাজি ছেড়ে আয়বর্ধনমুলক কর্মকান্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন শেরপুরের হিজড়ারা। কেউ কেউ হাঁস-মুরগী লালন-পালন, পশুপালন, খোলা জমিতে সব্জীচাষ, পুকুরে মাছের চাষ, কাপড় সেলাইয়ের কাজ করছেন, আবার কেউ কেউ আত্মকের্শ নিয়োজিত হওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এভাবেই নিজেদেরকে আত্মকর্মে নিয়োজিত করার মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করতে চান তারা।