পর্দার আরবি শব্দ হচ্ছে হিজাব। এর শাব্দিক অর্থ প্রতিহত করা, বাধা দান করা, গোপন করা, আড়াল করা, ঢেকে রাখা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের গাইরী মাহরাম (বিবাহ বৈধ) পুরুষ থেকে পা হতে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখাকে পর্দা বা হিজাব বলে।
এক কথায় নারীদের কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত পোশাককে হিজাব বলে।
হিজাব একটি বিশেষ পরিভাষা: ইসলামী শরিয়তে পর্দার বিধানের ক্ষেত্রে হিজাব একটি বিশেষ পরিভাষা। হিজাব শব্দ দ্বারা পর্দার সামগ্রিক বিধান বুঝানো হলেও নারীদের পর্দা সংরক্ষণের নিমিত্তে ব্যবহৃত বিশেষ পোশাককেও হিজাব বলা হয়। অবশ্য তা পর্দার প্রতিভূ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
হিজাব যখন আর্থিক মর্মার্থের দিক থেকে ব্যবহৃত হয় তখন তা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর যখন হিজাব নামক বিশেষ পোশাক বুঝানো জন্য ব্যবহৃত হয় তখন তা শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে জিলবাব, খুমুর, নেকাব, বড় চাদর ইত্যাদিও হিজাব নামক পোষাকের সহযোগী পোষাক কিংবা হিজাবের অন্তর্ভূক্ত পোশাক হিসেবে পরিগণিত হয়। (হিজাব ও বাস্তবতা, পৃষ্ঠা-১৩-১৪)।
পর্ব-৪ এর পর থেকে…
অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব: প্রসাধনী সামগ্রী আসলে রাসায়নিক উপাদান। এখন অবশ্য অনেকে হারবাল প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। সেগুলোও প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে জানা গেছে, অনেক প্রসাধনীর রাসায়নিক উপাদান অন্যান্য প্রাণীর কোষে ক্যান্সার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু মানুষের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করেছে তার প্রমাণ এখনো মেলেনি। তবে অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার মানব কোষের ওপর প্রভাব পরিলিক্ষিত হয়েছে। অনেক রাসায়নিক উপাদান ত্বক ভেদ করে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। আর যেসব উপাদান শরীরে ঢুকে যায়, সেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপাকক্রিয়া, লিভার কিংবা কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে প্রসাধনীতে রাসায়নিক উপাদানের মাত্রার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কোনো রাসায়নিক উপাদান স্বল্প মাত্রায় ব্যবহার উপকার কিংবা ক্ষতিকর নয়, কিন্তু বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে ক্ষতি হতে পারে। প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এমন অনেক উপাদান অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করে ক্যান্সার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেক সময় হারবাল প্রসাধনীর প্রচারণায় এর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে গুণগান করা হয়। কিন্তু হারবাল উপাদান আর রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোনো পার্থক্য নেই। (প্রসাধনসামগ্রীর ক্যান্সার ঝঁকি-দৈনিক কালের কণ্ঠ ২৪/৭/২০১১)।
আমাদের সমাজে অনেক নারীই হিজাব পরিধান না করে দৈনন্দিন অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য, তাদের অবশ্যই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।
নারীর পর্দাহীনতায় পুরুষও রোগের শিকার: পর্দা বা হিজাব ছাড়া চলাফেরা করলে শুধু যে নারীরাই শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়। বরং পুরুষও ক্ষতির শিকার হয়। একজন পুরুষ যখন কোনো নারীর দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকায় তখন তার দৃষ্টির ফলে শুধু যে নারীর দেহেই রাসায়নিক রি-এ্যাকশন হয় তা-ই নয় বরং এর নেগেটিভ প্রভাব পুরুষটির দেহেও পরে। পক্ষান্তরে কোনো নারী যখন কোনো পুরুষকে নিয়ে কু-চিন্তা করে কিংবা কল্পনাবিলাসী হয় তার প্রভাবও ওই পুরুষটির দেহে পরে। পুরুষটির দেহে তখন এক ধরণের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় একদম সেল (কোষ) লেভেল। ফলতিতে দেখা যায় নানা রকম শারীরিক সমস্য। এসব সমস্যর মধ্যে রয়েছে স্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলনের আগ্রহ কমে যাওয়া কিংবা হারিয়ে ফেলা।
প্রয়োজনের সময় লিঙ্গ উত্থিত না হওয়া কিংবা দ্রুত বীর্যপাত ইত্যাদি। টেষ্টোষ্টোরন হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ কমে যাওয়া কিংবা মৃত শুক্রাণু উৎপাদন। যার ফলে সন্তান উৎপাদনে দেখা দেবে নানা রকম সমস্যা। আর এ সব কারণে সংসারেও দেখা দিতে পারে নানা রকম অশান্তি, ঝগড়া,ফ্যাসাদসহ আরো বহুবিধ সমস্যা। যে সকল ডাক্তার নিঃসন্তান দম্পতিদের নিয়ে কাজ করেছেন তাদের চেম্বারে গেলেই দেখা যাবে এ ধরণের কত রোগী সেখানে।১২২
হিজাববিহীন নারী তার অজান্তেই গ্রহণ করে বিভিন্ন রোগঃযখন কোন নারী স্বর্প পোশাক পরিধান করে রাস্তায় বের হলো যাতে শরীরের স্পর্শকাতর অংশগুলি দৃশ্যমান-এ অবস্থায় সে তার গন্তব্যে চলে গেল। স্পর্শকাতর অংশগুলি দৃশ্যমান হবার কারণে একাধিক পুরুষের কু-দৃষ্টি তার ওপরে পড়ল। এমতাবস্থায় ওই পুরুষদের লোভাতুর দৃষ্টি এবং তার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কু-চিন্তার প্রভাব ট্রান্সিমিট হয়ে যাবে এবং ওই নারী তার অজান্তেই তা গ্রহন করে ফেলবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। এরপর ওই নারীর দেহের ভেতরে রাসায়নিক নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটবে (যা পূর্বে আলোচনা হয়েছে) একদম সেল (কোষ) লেভেলে। পরিণতিতে দেখা দেবে নানা রকম সব সমস্য। যেটাকে আমরা স্ত্রী-রোগজনিত সমস্য বা গাইনী প্রবলেম বলে থাকি। এর মধ্যে হতে পারে পিরিয়ডজনিত সমস্যা, স্রাবজনিত সমস্যা, ব্রেস্টে লাম্প বা টিউমার, ওভারীতে সিষ্ট, ইউটেরাসে সিষ্ট বা অন্য কোনো সমস্যা। (ইভ টিজিং কারণ ও প্রতিকার পৃষ্ঠা-৯৯)।
এতক্ষণ আলোচিত ব্যাখ্যায় এটা প্রমাণিত যে, হিজাব পরিধানে রয়েছে বৈজ্ঞানিক যৌক্তিকতা ও উপকারিতা। আর তা শোভাও পেয়েছে বিভিন্ন বিশিষ্ট চিকিৎসাবিদ ও সংস্থার মুখে। তো শুনুন তাদের কথা-
> অধ্যাপক কামাল মালাকার বলেন- সৌদি আরবের বেশিরভাগ নারীরাই পূর্ণ মুখঢাকা বোরকা পরিধানে অভ্যস্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে ‘ইপস্টেইন বার ভাইরাস’- এ আক্রান্তের হার খুবই কম। এই ভাইরাস নাক ও গলায় ক্যান্সারের কারণ হিসেবে কাজ করে।
> রিয়াদ থেকে রয়টার্স: বোরকা পরিধানে নারীদের নাক ও গলা স্বাভাবিকভাবেই ঢাকা থাকায় এ দু’টি স্পর্শকাতর স্থানে ভাইরাস আক্রমণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে এসব স্থানে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। একজন কানাডীয় চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে এ কথাগুলো বলা হয়।
> অধ্যাপক মালাকারেরর উদ্ধতি দিয়ে সৌদি গেজেট জানায়, হিজাব (বোরকা) শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীকে ক্ষত সৃষ্টির কবল থেকে রক্ষা করে। সৌদি আরবে বিশেষ করে নারীদের নাক ও গলায় ক্যান্সারের আক্রান্তের হার খুবই কম।
> রিয়াদস্থ কিং আব্দুল আজিজ হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কামাল মালাকার জানান, এটি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার ব্যাপার যে, কেবল একটি ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি বা প্রথা কীভাবে মানব জীবনের এত গভীরে প্রভাব ফেলতে পারে। (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পর্দা পৃষ্ঠা-১৬-১৭)।
> মিশিগানের তাহের মুনির বলেন, হেলথ সেন্টারের ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারীরা যদি পায়ের গোড়ালির উপরে পোশাক তোলে তবে তাদের ভেতর মহিলাসুলভ হরমোন কমে যাবে বা বৃ্দ্ধি পাবে। এর ফলে তাদের ভ্যাজাইনাল ইনফ্লামেশন, কোমর ব্যথা, আঙ্গিক দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেবে। (সুন্নতে নব্বী ও আধুনিক বিজ্ঞান পৃষ্ঠা-১৬৩)।
সুতরাং পর্দার বিধান পালনে অভ্যস্ত নারীর নিজেদের লাজুকতা ও শালীনতা রক্ষার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপদের ঝুঁকি কমায়। পর্দার বা হিজাব ইসলামের মৌলিক বিধানের অন্তর্ভুক্ত। পর্দার বিধান মেনে চলা মুসলিমদের প্রতি ইসলামের আদেশ। যতদিন পর্দার ব্যবস্থা করা হয় ততদিন শান্তি নিরাপত্তা এবং শালীন পরিবেশ বজায় থাকে। যে ঘর থেকে পর্দা উঠে যায় সে ঘর নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা এবং অশান্তি আকড়ে ধরে। এ কথা বললে অতিরিক্ত হবে না যে, পাশ্চাত্য সভ্যতা ও তাদের নারী মুক্তি আন্দোলন-নারী- পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে পুরুষদেরকে লম্পট ও নারীদেরকে পতিতার পর্যায় নামিয়ে দিয়েছে। আজকের পশ্চিমা সমাজ হারে হারে টের পাচ্ছে তাদের চলাফেরায় অবাধ মেলামেশা ও নগ্নতার কুফল, এবং তা যে কী করে সমাজের ও মানুষের ব্যক্তি জীবনে কাল হয়ে আনছে।
সিসিলির বিখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ স্টিফিন ক্লার্ক তার গবেষণায় লিখেছেন, অবাধ মেলামেশায় নারীদের আমি পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখেছি। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, ব্যভিচার অশ্লীলতা বেড়ে যায়। বহু সাজানো সংসার আমি ভেঙ্গে যেতে দেখেছি, বহু আত্নহত্যার ঘটনা ঘটতে দেখেছে, নারী-পুরুষকে জেলে যেতে দেখেছি। এসব ঘটনার মূল কারণ নারী-পুরুষদের অবাধ মেলামেশা অবাধে একে অন্যের ঘরে যাওয়া আসা। (সুন্নতে নব্বী ও আধুনিক বিজ্ঞান পৃষ্ঠা-১৬৩)।
পল রবিন (Paul Robbin) লিখেছেন, বিগত পঁচিশ বছরে আমরা এতখানি সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি যে, অবৈধ সন্তানকে আমরা প্রায় বৈধ সন্তানের পর্যায়ে এনে ফেলেছি। এখন এতটুকু করার আছে যাতে এখন হতে শুধু অবৈধ সন্তান জন্ম লাভকরতে পারে। (ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান পৃষ্ঠা-৮৩)।