সম্প্রতি গারো পাহাড়ে হাতি মানুষের লড়াই চরম আকার ধারণ করেছে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে শেরপুরে ২ টি হাতি মারা গেছে। আবার এদিকে হাতি নষ্ট করেছে প্রায় শতাধিক মানুষের ক্ষেতের ধান। এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠেছে বন কার, হাতির না মানুষের। তবে এ নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন যুক্তি।
হাতি সম্পর্কে শেরপুর সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাহানা আক্তার বলেন, একটি মা হাতি প্রায় ২২ মাস গর্ভধারণ করে। প্রায় সাত বছর বয়সে হাতি শারীরিক পূর্ণতা পায় এবং ১৪-১৫ বছর বয়সে যৌন পরিপক্বতা লাভ করে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতির উচ্চতা সাধারণত ৭-১০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং লেজের আগা থেকে শুঁড়ের মাথা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮-২৫ ফুটের মতো হতে পারে। গড়ে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতির ওজন ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। দিনে প্রায় ১৫০ কেজি খাবার ও ২১০ লিটার পর্যন্ত পানি গ্রহণ করে থাকে একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতি। একটি হাতি সাধারণত ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। আর এ সময়ে তাদের মোট ছয়বার পর্যন্ত দাঁত গজায়।
হাতির বাড়ি কই, এ প্রশ্নে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের ট্রেইনার আদনান আযাদ শেরপুর টাইমসকে বলেন, গুগুল ম্যাপ কিংবা ঝিনাইগাতীর বয়স্কদের কাছ থেকে জানতে পারবেন আজ থেকে ২০ বা ৩০ বছর আগে গারো পাহাড় একটি গহীন বন ছিল। এখানে হাতি, বাঘ, বন্য শুকুর, বন্যবিড়াল, বন্য মোড়গের দেখা মিলত হরহামেষেই। মানুষ দিন দিন বন কেটে সরকারি জায়গা দখল করে বাড়িঘর বানাচ্ছে। বন ন্যাড়া করে ফেলেছে। বনে মানুষ অনুপ্রবেশকারী। হাতি বা অন্যসব বন্যপ্রাণীর বাস করার জায়গা মানুষ দখল করেছে তাই প্রাণীরা তাদের জায়গা পাচ্ছেনা। আর অনুপ্রবেশকারী মানুষরা এসব বন্যপ্রাণীদের বিশেষ করে হাতিকে বন থেকে তাড়াতে যুদ্ধে নেমেছে। হাতির কান্না দেখার যেন কেউ নেই। হত্যা, হামলা, বাসস্থান উজার এসবের জন্য হাতির অস্তিত্ব এখন সঙ্কটের মুখে।
তবে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ির পাহাড়ি কৃষকদের অভিযোগ, বুনো হাতি তাদের ফসল, বগান, বাড়িঘর নষ্ট করে ফেলছে। তারা বলেন, আমরা জানমালের অনিরাপত্তায় আছি। আমাদের অনেক লোক হাতির আক্রমণে মারা গেছে।
রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নির্বিচারে বনভূমি দখল করে চাষাবাদ করায় হাতি লোকালয়ে এসে পড়ছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেও কোনো সমাধান করতে পারছি না, কারণ আমাদের জনবল সংকট। গত ৯ নভেম্বরের হাতি হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শেরপুরে এই প্রথম মামলা করছে বন বিভাগ।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, শেরপুর সীমান্তের গারো পাহাড়ে প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেখা যায় বন্য হাতি। বন্য প্রাণির বিচরণের জায়গায় আবাসভূমি গড়ে তোলায়, হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। স্থানীয়দের আক্রমণে দেড় দশকে মৃত্যু হয়েছে ২৫টি হাতির, হাতির আক্রমণে প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক মানুষের।