১৯৭৮ সালে হাটে হাটে গিয়ে ধান কেনাবেচার মধ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন
শেরপুরের মো. জয়নাল আবেদীন। পরে ব্যবসা আরও একটু বড় হওয়ায় রাইস মিল ভাড়া
নিয়ে নেন। ১৯৮৪ সালে জেলা সদরের ঢাকলহটি এলাকায় নিজের রাইস মিল প্রতিষ্ঠা
করেন। এখন তার রয়েছে তিনটি অটো রাইস মিল ও একটি জুট মিল। সফল ব্যবসায়ী
হিসেবেই শুধু নয়, জেলার দীর্ঘমেয়াদী করদাতাও তিনি। ৩১ বছর থেকে আয়কর
পরিশোধের স্বীকৃতি হিসেবে এবার পেয়েছেন সরকার ঘোষিত ‘কর বাহাদুর’ উপাধি।
শেরপুর জেলার কর বাহাদুর এবং জে অ্যান্ড এস গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব
মো. জয়নাল আবেদীন শেরপুর টাইমসকে : বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আয়কর দিলে ব্যবসার
কোনও ক্ষতি হয় না। এতে ব্যবসায়ী হিসেবে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা
বাড়ে।’ কর বাহাদুর আলহাজ্ব মো. জয়নাল আবেদীনের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪
এপ্রিল, শেরপুর জেলা সদরের গোপালবাড়ী এলাকায়। বাবা মরহুম ইউনুছ আলী ও মা
জবেদা বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি প্রথম সন্তান। স্ত্রী ছফুরা বেগম
গৃহিণী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা তিনি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর
ব্যবসা শুরু করেন। এখন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।
মো. জয়নাল আবেদীনের পরিবারের চার সদস্যও নিয়মিত আয়কর দিচ্ছেন। বড় ছেলে
মো. সাদুজ্জামান সাদী ১০ বছর, ছোট ছেলে সাইফুল নাহী জিল্লুর সাকী পাঁচ
বছর ও স্ত্রী ছফুরা বেগম ১১ বছর ধরে নিয়মিত আয়কর দিয়ে আসছেন।
টানা পঞ্চমবারের মতো জেলার সেরা আয়করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন জয়নাল
আবেদীনের বড় ছেলে সাদাত অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক মো. সাদুজ্জামান সাদী। তিনি শেরপুর টাইমসকে বলেন, ‘আয়কর ফাঁকি
দিলে নিজের ও দেশের ক্ষতি। তাই যারা আয়করের আওতায় পড়েন তাদের সবাইকে আয়কর
দেওয়ার আহ্বান জানাই।’
২০০৮ সাল থেকে মো. সাদুজ্জামান সাদী শেরপুর সদর উপজেলার হাওরা নিচ পাড়া,
সূর্যদি পূর্ব পাড়া এবং পাকুরিয়া এলাকায় প্রায় ১১০ একর জমির ওপর গড়ে
তুলেছেন সাদাত অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রকল্প।
বর্তমানে এখানকার মৎস্য প্রকল্পে ৭৪টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি মূলত মাছ ও গবাদি পশু পালন এবং দুগ্ধ খামার হিসেবে প্রতিষ্ঠা
করা হয়েছে। পাশাপাশি পুকুরের পাড় দিয়ে হাজার হাজার পেঁপে ও লেবু গাছ
রোপণ করে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে।
মো. জয়নাল আবেদীন ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সেরা বিদ্যুৎ গ্রাহক (শিল্প)
সম্মাননা পান। তিনি বিভিন্ন সময়ে শেরপুর চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি,
শেরপুর জেলা ট্র্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শেরপুর জেলা মিল
মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্যও পরিচিতি রয়েছে জয়নাল আবেদিনের পরিবারের।
নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের
সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন তারা।
শেরপুরের সহকারী কর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাস জানান, শেরপুর জেলায় মোট
করদাতার সংখ্যা ১৩ হাজার ৮২৭ জন। এ বছর শেরপুর জেলায় নতুন করদাতার সংখ্যা
এক হাজার ২৫০ জন। করদাতাদের মোটিভেশনের মাধ্যমে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করা
হচ্ছে। তিনি আরও জানান, করদাতাদের সুবিধার জন্য জেলার সীমান্তবর্তী
নালিতাবাড়ী উপজেলায় নতুন কর অফিস খোলা হচ্ছে। এছাড়া জেলা কর অফিস
দালালমুক্ত করাসহ কর বিষয়ক আইনি পরার্মশও দেওয়া হচ্ছে। জেলায় ট্র্রেড
লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৯৫ ভাগ এবং চাকরিজীবীদের ৩৫ ভাগ
করের আওতায় আছেন বলেও জানান তিনি।
শেরপুর টাইমস/ বা.স