হযরত শাহ কামাল (র.) মাজার শরীফটির অবস্থান শেরপুর জেলা শহরের পশ্চিমে কসবা কাচারি পাড়ায় । মাজারটি প্রায় ১ একর ৭৬ শতাংশ জায়গা জুড়ে অবস্থিত । এর পূর্ব পাশে একটি ঈদগাহ মাঠ এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি মসজিদ। মাজারটিতে হযরত শাহ কামাল (র.) সহ তার সফরসঙ্গী, ব্যবহৃত ঘোড়া ও মাজারের তিনজন খাদেমের কবর রয়েছে বলে জানা যায়।
ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ভারত উপমহাদেশে যে ১২ জন আউলিয়া ৩৬০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে আরাকান হয়ে চট্টগ্রামে আসেন হযরত শাহ কামাল (র.) ছিলেন তাদের একজন। তিনি আরব দেশের ইয়েমেন প্রদেশের অধিবাসী ছিলেন। তার বাবা-মা’র আদি নিবাস তুরষ্কে । তিনি হযরত আলী (রা.) এর বংশধর । তিনি ছিলেন উচ্চস্তরের ওলী। আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে ১৫০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় আসেন । প্রথমে তিনি মহেন্দ্রগঞ্জ থানা (বর্তমানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি থানা) ও জামালপুর জেলার কামালপুরে আস্তানা গড়েন। এখানেই তিনি প্রথম ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজ শুরু করেন। পরে তিনি আসেন জামালপুর জেলার দুরমুটে। ১৬৩৯ খ্রিষ্টাব্দে শাহজাদা সুজার বাংলার শাসন ভার গ্রহনের প্রথম পর্যায়ে মুঘলরা যখন শেরপুর শহরের কসবায় বসবাস আরম্ভ করেন তখনও হযরত শাহ কামাল (র.) জীবিত ছিলেন এবং দুরমুট বা বাকলাইতে অবস্থান করছিলেন। কসবায় বসবাসকারী মুঘলরা হয়তো শাহ কামাল (র.) এর অলৌকিক ক্ষমতার কথা জানতে পারেন এবং তাদের প্রশাসনিক কেন্দ্রের কাছে এনে কাজি গলির পশ্চিমে তাকে কিছু জায়গা প্রদান করে বসবাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। পরবর্তীতে এ স্থানটিই হযরত শাহ কামাল (র.) এর মাজার হিসেবে পরিচিত লাভ করে। তিনি ১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
কথিত আছে, হযরত শাহ কামাল (র.) ইন্তেকাল করার সংবাদটি একইসঙ্গে ৭টি স্থানে প্রচার হয়। স্থানগুলো হলো, জামালপুর জেলার দুরমুট ও কামালপুর, শেরপুর জেলা শহরের কসবা, নেত্রকোনা জেলার শাহ সুলতান রুমীর মাজার, ময়মনসিংহ জেলার সুসং দুর্গাপুর, চট্টগ্রামের বারো আউলিয়া ও দিল্লীর আব্দুল কাদের জিলানীর চিল¬া খানায়।
মুসলিম সাধক হযরত শাহ কামাল (রা.) এর শেরপুরের মাজার শরীফে প্রতিবছর ১ চৈত্র থেকে অনুষ্ঠিত হয় মাস ব্যাপী বার্ষিক ওরশ। মাজার কমিটির আয়োজনে বার্ষিক ওরশ আনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্ত-পাগল আর আশেকানদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে মাজার প্রাঙ্গন ও আশপাশের এলাকা। শত বছরের পুরনো এ মাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ওরশ পালন শুরু হয় আশির দশক থেকে। ওরশে চলে ভক্ত ও আশেকানদের জিকির-আজগার, তেলওয়াত, দোয়া ও পাগলদের ভক্তিমূলক গানের আসর । মাজার জিয়ারতে আসেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। সেসঙ্গে ওরশকে ঘিরে মাজারের চারপাশে বসে বিভিন্ন পসড়ার মেলা ।