হজের আমল যাদের নসিব হয়েছে, তারা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবান। হজ করার ইচ্ছা থাকাও ইবাদত। ভালো কোনো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলে, ওই কাজ করার জন্য আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন।
আল্লাহ সামর্থ্যবান লোকের ওপর হজ ফরজ করেছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই গোটা মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘরটি বানিয়ে রাখা হয়েছিল তা ছিল বাক্কায় (তথা বর্তমান মক্কায়), এ ঘরকে কল্যাণ ও মঙ্গলময় এবং পথপ্রদর্শক বানানো হয়েছিল। এখানে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো, রয়েছে ইবরাহিমের দাঁড়ানোর স্থান, যে এখানে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ।
দ্বিতীয় মর্যাদা হচ্ছে মানবজাতির ওপর, আল্লাহর জন্য এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এ ঘরে পৌঁছা পর্যন্ত যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকবে, সে যেন এ ঘরে হজ আদায় করে।’ (সূরা আল-ইমরান: ৯৬-৯৭)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, তোমরা হজ ও ওমরা পরপর সঙ্গে সঙ্গে আদায় কর, কেননা এ দুটি কাজ দারিদ্র্য ও গোনাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যেমন রেতি লোহার মরিচা ও স্বর্ণ-রৌপ্যের জঞ্জাল দূর করে দেয়। আর কবুল হওয়া হজের সাওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (তিরমিজি: ৩/৮১০)।
ফরজ হজ আরবি জিলহজ মাসে পালন করতে হয়। ওমরা হজ বছরের যে কোনো সময় পালন করা যায়। হজের মর্যাদা কেউ লিখে কিংবা বর্ণনা করে শেষ করতে পারবে না। হজের সময় সংক্ষিপ্ত কিন্তু ইহার মর্যাদা ব্যাপক। হজ পালনের সঙ্গে সঙ্গে হজ পালনকারী বেগোনাহ হয়ে যান। তার আমলনামা থেকে গোনাহ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে অশ্লীল কথা বা গোনাহের কাজে জড়িত না হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হজ করল, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এলো। (বোখারি: ১৪৩১)।
দুনিয়াতে যারা নেক আমল করবে, তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা পরকালে সন্তুষ্ট থাকবেন। কিন্তু দুনিয়ার ভোগ-বিলাশ এবং নফসের খায়েশ মিঠাতে গিয়ে কেউ কেউ মন্দ কাজে জড়িয়ে পড়েন। মন্দ কাজে জড়িয়ে পড়ার ফলে আমলনামায় গোনাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে আল্লাহর রহমত বান্দা থেকে দূরে চলে যায়। তখনই বান্দা নানা রকমের দুঃখ কষ্টে হাবুডুবু খেতে থাকে।
হজের আমলের বরকতে বান্দার আমলনামা ধবধবে সাদা কাপড়ের মতো হয়ে যায়। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ গৃহের (বায়তুল্লাহর) হজ আদায় করল, সে স্ত্রী সহবাস করল না (হজ পালনকালীন সময়) এবং কোনো অন্যায় কাজও করল না, সে এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করবে যেমন মাতৃগর্ভ থেকে সদ্যজাত শিশু (নিষ্পাপ হয়ে) ভূমিষ্ঠ হল (বোখারি: ১৭০২)।
নেক কাজের নিয়ত করলে তা দ্রুত করা বুদ্ধিমানের কাজ। হজ করার ইচ্ছা থাকলে দ্রুত আদায় করে নেয়া উত্তম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, হজের ইচ্ছা পোষণকারী যেন তাড়াতাড়ি তা সমর্পণ করে। কেননা সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, তার উট হারিয়ে যেতে পারে বা তার ইচ্ছা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। (মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৩৪০)।
হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো হাজীর সঙ্গে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম করবে, করমর্দন করবে এবং তাকে তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে অনুরোধ জানাবে তার গৃহে প্রবেশের আগে। কেননা হাজী হলেন গোনাহমুক্ত পবিত্র ব্যক্তি।’ (মেশকাত: ২৪২৩)। আল্লাহতায়ালা জীবনে একবার হলেও হজ করার তৌফিক দান করুক। লেখক: প্রাবন্ধিক। সূত্র: যুগান্তর।