ঈদের ছুটি শেষে কর্মজীবী সাধারণ মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। কর্মস্থলে পৌঁছতে যানবাহন সংকট আর বাড়তি ভাড়ার কারণে তাদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। শেরপুর থেকে তারা মাইক্রোবাস, ছোট গাড়ি, পিকআপ, ছোট ট্রাকের পেছনে গাদাগাদি করে বসে যাচ্ছে। শেরপুর থেকে বেশিরভাগ এসব ছোট গাড়ি করে গাজীপুর ও ঢাকায় যাচ্ছে।
রবিবার (১৬ মে) শেরপুরে বিভিন্ন সড়কে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে সবচেয়ে বেশি গাড়ি ছেড়ে যায়।
ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের হাফসা বেগম। চাকরি করেন গাজীপুরের স্কয়ার মাস্টারবাড়িতে একটি পোশাক কারখানায়। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে বাড়িতে এসেছিলাম। সবার সাথে ঈদ করলাম। তাছাড়া সামনে নাকি আরও কঠোর লকডাউন দেবে সরকার। তাই তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছি। সময় মতো অফিসে যোগ দিতে না পারলে চাকরি হারাতে হবে।
শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা গ্রামের সেকান্দর আলি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পিকআপ গাড়িতে চেপে বসেছেন।তিনি বলেন, আমাদের কারখানা পুরোপুরি না খুললেও শুধু শিপমেন্টের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সেকশন বৃহস্পতিবার থেকে খোলা। হাতে সময় থাকলেও ভিড় এড়াতে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে আগেভাগেই চলে যাচ্ছি।
কালিয়াকৈরে কাঁচামালের ব্যবসা করেন জহুরুল ইসলাম আর সেখানে চায়ের দোকান করেন আব্বাস উদ্দিন। তারা বলেন, বছরে দুটি ঈদে বাড়িতে আসি। এছাড়া বাড়িতে তেমন একটা আসা হয় না। স্ত্রী, সন্তান নিয়েই কালিয়াকৈরে থাকি। দেশে সবার সাথে ঈদ করতে বাড়ি এসেছি। এখন আস্তে ধীরে ফিরে যাচ্ছি। ৬’শ টাকা করে সিট ভাড়া করেছি এ মাইক্রোতে।
ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া মোড়ে কথা হয় আব্দুস ছামাদের সাথে। তারা আট-দশজন মিলে একটা পিকআপ ভাড়া করে উত্তরায় যাচ্ছে।
বছরের দুই ঈদে ভোগান্তি নিয়েই বাড়িতে ছুটে আসেন সালমা আক্তার। কথা হয় আখের মামুদ বাজারে পিকআপ গাড়িতে। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি চরশেরপুর। কাজ করি মিরপুর ১০ নাম্বারের ভিশন গার্মেন্টসে। এখন নতুন চাকুরী নিব অন্যকোথাও। তাই আগেভাগেই কষ্ট করে চলে যাচ্ছি।
মানবাধিকার কর্মী আলমগীর আল আমিন বলেন, শত শত নারী-পুরুষ, শিশু গাদাগাদি করে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই খালি মিনিট্রাক, লেগুনা ও পিকআপে ওঠে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। লকডাউনজনিত বিধিনিষেধ, অতিরিক্ত ভাড়া, অবর্ণনীয় ভোগান্তি-সব উপেক্ষা করে মানুষ ‘কর্মস্থলে’ ফেরার চেষ্টা করেছে। এ অবস্থায় মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মস্থলে ফিরতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সাময়িকভাবে হলেও দূরপাল্লার যানবাহন চালু করা দরকার।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, গতকাল ১৬ মে রবিবার পর্যন্ত শেরপুরে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭২৩ জন। এদিকে সুস্থ হয়েছেন ৬৭৯ জন। মারা গেছেন ১৪ জন। বর্তমানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ জন।