মনোমুগ্ধকর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। গান গেয়ে স্টেজ মাতালেন বব উইলিয়ামস ও এইডা গারিফুলিনা। তাদের মন মাতানো গান ও রাশিয়ার ঐতিহ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে লুঝনিকি স্টেডিয়াম যেন হয়ে ওঠে একখণ্ড রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণার পরেই উদ্বোধন হয় বিশ্বকাপের। এর পরেই মহারণে নেমে পড়ে স্বাগতিক রাশিয়া ও সৌদি আরব।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে সৌদি আরবকে রীতিমত গোলবন্যায় ভাসিয়েছে রাশিয়া। সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ে শুভ সূচনা করলো লেনিনের দেশ। সাত ম্যাচ জয়হীন থাকার পর এ ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে মাঠে নামে লেভ ইয়াসিনের দেশ।
ম্যাচের শুরুতেই ২ মিনিটের মাথায় কর্নার পায় রাশিয়া। কিন্তু বাজে ক্রসের জন্য ভেস্তে যায় সেই কর্নার। ম্যাচের ১০ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর দুর্বল শট নেন জাগোয়েভ কিন্তু সৌদি রক্ষণভাগের গায়ে লেগে বাইরে গেলে কর্নার পায় রাশিয়া। কর্নার থেকে রুশ মিডফিল্ডারের বাড়ানো বল ডি বক্স থেকে ফেরালে তা যায় লেফট উইংয়ে থাকা গলোভিনের কাছে।
রুশ এই মিডফিল্ডারের দুর্দান্ত ক্রসে ১২ মিনিটে মাথা ছুঁয়ে বিশ্বকাপের প্রথম গোলটি করেন মিডফিল্ডার ইউরি গ্যাজিন্সকি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এটিই তার প্রথম গোল। ২০০৬ সালের পর প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে প্রথম অন টার্গেট শটেই গোল করলেন গ্যাজিন্সকি।
প্রথম গোলের দু মিনিট পরেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু সমলভের শট সৌদি রক্ষণভাগের ফুটবলারের পায়ে লেগে প্রতিহত হয়ে গোলমুখে যাওয়ার সময় পাঞ্চ করে সৌদিকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন সৌদি গোলরক্ষক আল মায়ুফ। ২৫ মিনিটে পায়ের পেশীতে টান লেগে মাঠ ছাড়েন রাশিয়ার জাগোয়েভ। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন ভিয়ারিয়ালে খেলা চেরিশভ।
২৮ মিনিটে ৩০ গজ দূর থেকে আল দাওসারির নেওয়া দূর পাল্লার লক্ষ্যভ্রষ্ট শট কেবল হতাশাই বাড়ায় সৌদি আরবের। ৩৬ মিনিটে সৌদি রক্ষণভাগের ফুটবলার ওসামা হাওজাবির করা ট্যাকেলে ডি বক্সের ভেতর সমলভ পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করেন। কিন্তু রেফারি ছিলেন অনড়।
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার দু মিনিট আগে মিডফিল্ডার রোমান জবনিনেরের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের ভেতর দু’জনকে কাটিয়ে দর্শণীয় এক গোল করেন বদলি হিসেবে নামা ড্যানিস চেরেশভ। দুই গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় রাশিয়া।
বিরতি থেকে ফিরে ৫২ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে সামেদভের শট গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ৫৬ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ পেয়েছিল সৌদি আরব। আল বুরাকের ডি বক্সের ভেতর বাড়ানো ক্রসে আল জসিম ও আল সাহলাভি দুজনেই পা লাগাতে ব্যর্থ হন। কিন্তু ৭১ মিনিটে আবারো এগিয়ে যায় রাশিয়া। এবারও বদলি খেলোয়াড়ের গোলে ব্যবধান বাড়ায় তারা।
গলোভিনের দারুণ ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেডে গোল করে রাশিয়াকে ৩-০ গোলের লিড এনে দেন আর্তেম জিউভা। বদলি হিসেবে নামার ৮৮ সেকেন্ডের মাথাতেই গোল করলেন তিনি। একটুর জন্য বদলি হিসেবে নেমে দ্রুত গোলের রেকর্ডটি নিজের করে নিতে পারেননি তিনি। ২০০২ সালে পোল্যান্ডের জিলাকও মাত্র ৫৯ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন।
এই গোল হজমের ফলে একটি বাজে রেকর্ডকে সঙ্গী করেছে সৌদি আরব। ১৯৯৪ সালের পর বিশ্বকাপে হেড থেকে ১৪টি গোল হজম করলো তারা। যা বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া ১৯৯৪ সালের পর প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ৩ গোল করলো রাশিয়া। ম্যাচের বাকিটা সময় রাশিয়ানদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে সৌদি। ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্তে দূরপাল্লার দুর্দান্ত শটে নিজের দ্বিতীয় এবং রাশিয়ার হয়ে চতুর্থ গোলটি করেন চেরিশভ। ম্যাচ শেষ বাঁশি বাজার আগে আরো একটি গোল করে রাশিয়া। এবার গোলের খাতায় নাম লেখান গলোভিন। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে উদ্বোধনী ম্যাচেই ফ্রি কিকে গোল করলেন গলোভিন। দুই এসিস্টের পাশাপাশি ১ গোল করে ম্যাচের অন্যতম নায়কও বনে গেলেন তিনি। ৫-০ গোলের বিশাল জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার দিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকলো রাশিয়া।