আগামী ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেট পেশ করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট ঘোষণার আগেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চাল, ডালের পর অতি মুনাফার লোভে সিগারেট মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে।
তাত্ত্বিকভাবে একটি বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্পদের পুনর্বণ্টন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। এই লক্ষ্য পূরণে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আয়তন বাড়ছে। কিন্তু কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আবার সম্পদের পুনর্বণ্টন সঠিকভাবে না হওয়ায় দেশে আয়বৈষম্য এখন সবচেয়ে বেশি। আর প্রবৃদ্ধি হলেও সেই হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় অর্থনীতিবিদেরা একে বলছেন আয় ও কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি। ফলে প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই সমানভাবে পাচ্ছে না।
রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ব্রান্ডের সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে সংকট। ইতিমধ্যে বাজারে সিগারেটের মূল্য নির্ধারিত দামের থেকে প্যাকেট প্রতি মূল্য নেয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১৫টাকার বেশি। বেনসন সিগারেটের মূল্য ১৩ থেকে ১৪ টাকা, গোল্ড লিফ ৯ থেকে ১০টাকা এবং অন্যান্য সিগারেট প্রতি ১ থেকে ২টাকা বেশি রাখা হচ্ছে বাজারের পাইকারী ও খুচরা দোকান গুলোতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এক পাইকারী দোকানদার বিডি২৪লাইভকে বলেন, ঈদের আগে থেকে সিগারেট আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ঈদের পরের দিন থেকে সিগারেট সংকট দেখা দিয়েছে। তাই আমাদের বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। বেশি দামে কিনে আমরা তো আর কম দামে বিক্রি করব না। আমরা কম দামে কিনতে পারলে অবশ্যই কম দামে বিক্রি করব।
তিনি আরও বলেন, বেশি টাকার লোভে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা সিগারেটের মজুত রাখছে। আগামী কয়েকদিন পর বাজেট ঘোষণা হবে। এর আগে সরকার বলেছিলে যে সিগারেটের দাম বাড়বে সেই কথার উপরে ভিত্তিকরে দেখা দিয়েছে সিগারেট সংকোট। আর এই সুযোগে বাড়ানো হয়েছে মূল্য।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ জানাতে গিয়ে যাত্রাবাড়ীর এক পাইকারি দোকানদার কালাম হোসেন বিডি২৪লাইভকে বলেন, গত কয়েক দিনে পাইকারী বাজারে কিছু পণ্যের বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মূলত, খুচরা বিক্রেতারা পণ্য মজুদ করতে গিয়েই এমন করছেন। তারা এখন ধারদেনা করে সাধ্যমতো পণ্য মজুদ করছেন রমজানে বাড়তি দামে বিক্রির আশায়। অনেকে আবার চড়া সুদে টাকা নিয়ে পণ্য মজুদ করছেন। কিছু মানুষের অতিরিক্ত ভোগ করার মানসিকতার কারণেই মদুদদাররা বাড়তি মুনাফা লোটার সুযোগ পায়।
সিগারেটের দাম বেশি রাখা হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে শ্যমলীর রাস্তার পার্শ্বের এক সিগারেট বিক্রেতা (হকার) বলেন, আমরা তো পেটের দায়ে সিগারেট বিক্রি করি। আমাদের কাছে প্যাকেট প্রতি ৫ থেকে ৭টাকা করে বেশি দাম রাখা হচ্ছে। আমরা তো দু’পাঁচ টাকা লাভ করব।
এবিষয়ে এক সিগারেট ক্রেতা বলেন, এটা আমাদের সাথে প্রতারণার মত। আমার কাছে ১৫টাকা পযর্ন্ত রাখা হয়েছে একটি সিগারেটের দাম। যেটার নির্ধারিত দাম ১১টাকা। আমার মনে হয় এই বিষয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের নজরে নেয়া উচিত। আজকাল সিগারেটেও ফরমালিন। প্রতিটি সিগারেটের দাম নির্ধারিত দামের থেকে প্যাকেট প্রতি নেয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১৫টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার থাকবে ৫ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার আশপাশে। এ থেকে সামান্য বাড়তে পারে, কমও হতে পারে। শেষ মুহূর্তের কাটাছেঁড়ার সময় তা চূড়ান্ত হবে। এই ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার। আর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আদায় করতে হবে সোয়া ৩ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার। কিন্তু বাজেট ব্যয় শেষ পর্যন্ত কমবে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি কমবে বাজেটের আয়। গত মার্চ পর্যন্ত সময়ে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। অর্থবছর শেষে সংশোধন হবে আরেক দফা।
নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। বরাবরের মতো ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে। তবে সমস্যা মূলত ঘাটতি অর্থায়নের উৎস নিয়ে। যেমন নতুন বাজেটে ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৬০ হাজার কোটির কিছু বেশি, আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা।