রমেশ সরকার :
মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে শিক্ষকের জুড়ি মেলা ভার। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের কোন বিকল্প নাই। উন্নত জাতি গঠনে মেধা সম্পন্ন শিক্ষক প্রয়োজন। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, দেশের সর্বোচ্চ মেধাকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা শিক্ষকতা পেশায় আসেন তারা কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে তারপর শিক্ষকতা পেশায় আসেন। মেধা সম্পন্ন শিক্ষকই পারেন মেধা সম্পন্ন জনশক্তি তৈরি করতে। সেসকল দেশে মেধায় যারা প্রথম তারাই নিয়োগ প্রাপ্ত হন প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে। আর যারা কম মেধাসম্পন্ন তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে।
পক্ষান্তরে আমাদের দেশের চিত্র উল্টো। আমাদের দেশের মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান না। মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেন না। তারা চলে যান অন্যান্য পেশায়। আমাদের দেশে যাদের কোনো গতি নাই তারাই শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। তাও আবার অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে খুশি করার মধ্য দিয়ে। এক সময় দেখা যেত শিক্ষকদের জীবন যাত্রার মান খুবই অনুন্নত ছিল। সেসময় তারা সঠিক সময়ে বেতন ভাতা পেতেন না। অনেক কষ্ট করে শিক্ষকরা সংসার চালাতেন।
ফলশ্রুতিতে শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি শুরু করেছিলেন। প্রাইভেট টিউশনি’র শুরুটা হয়েছিল বিত্তবানদের সন্তানদের লেখাপড়ার মধ্য দিয়ে। বর্তমানে বিত্তবানদের সন্তানদের অনুকরণ করে মধ্যবিত্তদের সন্তানরাও প্রাইভেট টিউশনির দিকে ঝোঁকে পরেছে। একারণেই প্রাইভেট টিউশনি, কোচিং সেন্টার ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে ওঠেছে। বর্তমানে এর বিশাল আকার ধারণ করেছে। শহর কিংবা মফস্বলে আকর্ষণীয় নাম ফলকের কোচিং সেন্টারের সাইনবোর্ড দৃশ্যমান। যা দেখে অভিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও স্পেশাল বা বিশেষ ক্লাসের নাম করে আদায় করা হয় কোচিং ফি।
আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির বিষবৃক্ষের ডালপালার বিস্তার লাভ করেছে শিকর থেকে শেখড়ে। এ ডালপালা কেটে ফেলা আদৌ কি সম্ভব? হয়তো সম্ভব সরকার যদি এর সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। রাজনৈতিক প্রভাব থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করতে হবে। যোগ্য এবং মেধা সম্পন্ন শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষকদের মান সম্মত বেতন ভাতা দিতে হবে। শিক্ষা গুরু হিসাবে দিতে হবে সর্Ÿোচ্চ মর্যাদা।
এছাড়া, শিক্ষিত লোকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে আসতে হবে। শিক্ষিত লোক যাতে ম্যানেজিং কমিটিতে আসে এর একটা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বর্তমানে দেখা যায় অনেক অশিক্ষিত লোক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্য নির্বাচিত হন। যিনি শিক্ষক শব্দের প্রকৃত অর্থই জানেন না এমন লোক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সদস্য নির্বাচিত হন । একজন অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়ে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রীধারী একজন শিক্ষকের সাথে কিভাবে ব্যবহার করবেন এমন শিষ্টাচারই তার জানা নাই।
অনেক সময় তাদের স্বার্থের বেঘাত ঘটলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করে থাকেন। এমন লোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার করে শিক্ষার মান মর্যাদা ক্ষুন্ন করে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও এতে প্রভাবিত হয়ে থাকে। শিক্ষকরা মন খুলে কথা বলতে পারেন না। তাদের মন খুলে কথা বলার সুযোগ সুষ্টি করতে হবে। দিতে হবে সঠিক মর্যাদা।
ইতিহাস আমাদের স্বাক্ষ্য দেয় সেই সময়ের অত্যাচারী রাজা বাদশারাও শিক্ষককে যথাথথ সম্মান এবং তাদের সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলতেন। তারা মনে করতেন শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষা গুরু। আর এ পরম পুজনীয় শিক্ষা গুরুকে কোনো ভাবেই অসম্মান বা কটাক্ষ করে কথা বলতেন না। সালিনতা বজায় রেখে শিক্ষকদের সম্মান করতেন।
শিক্ষা গুরুকে দেওয়া হত সর্বাধিক মর্যাদা। কালের বিবর্তনে গুরু শিষ্যের প্রকৃত অর্থ পরিবর্তন হয়েছে। এখন শিক্ষাকে বাজারের পণ্য হিসাবে মনে করা হয়। আর শিক্ষককে বিক্রেতা হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। বর্তমানে এটাই বাস্তব আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের ভুমিকার কোনো বিকল্প নাই। সরকারই পারেন শিক্ষকদের আগের মর্যদায় ফিরিয়ে আনতে।
লেখক : রমেশ সরকার, স্টাফ রিপোর্টার, শেরপুর টাইমস ।