মুক্তা তো প্রায় সবাই পরে থাকেন, কিন্তু জানেন কি মুক্তার আসল ও নকলের রহস্য? কিংবা কখনো ভেবে দেখেছেন কি সব ঝিনুকেই কি মুক্তা থাকে? এটা সত্যি যে, ঝিনুকের পেটে মুক্তা জন্মায়। তবে সব ঝিনুকে মুক্তা থাকে না। প্রাণীবিজ্ঞানীদের মতে, মাসেল্ শ্রেণির ঝিনুকের পেটে মুক্তা হয়। এর রাসায়নিক উপাদান হলো কনকায়োলিন ক্যালসাইট এবং ক্যালসিয়াম কার্বোনেট।
খাওয়ার সময় ঝিনুক যখন খোলস ফাঁক করে, তখন যদি বালির কণা বা অন্য কোনো কঠিন পদার্থের চূর্ণ তার দেহের মধ্যে ঢুকে যায় এবং না বের হয় তখন ঝিনুকের দেহে লনের সৃষ্টি হয়। তখন ঝিনুকের অঙ্গ থেকে সাদা ঘন আঠালো রস ক্ষরিত হয়ে বহিরাগত কণাটিকে বেষ্টন করে স্তরে স্তরে জমাট বাঁধতে থাকে। এই জমাটি বস্তুকেই মুক্তা বলে।
পারস্য উপসাগরে ঝিনুকের পেটে যে মুক্তা জন্মায় তাকে বসরাই মুক্তা বলে। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তা। এর দামও অনেক বেশি। মায়ানমারে ইরাবতী নদীতে ঝিনুকের পেটে যে মুক্তা হয় তাকে বার্মিজ মুক্তা বলে। এটিরও বেশ দাম। তবে তা বসরাই মুক্তার চেয়ে সস্তা। এছাড়া চিন সাগর ও জাপানে মুক্তার চাষ হয়। এই চিনা ও জাপানি মুক্তার গুণ অল্প, ফলে দামও কম। চন্দ্রের প্রতিকারে শ্বেত মুক্তো ধারণ খুবই কার্যকরী।
অলংকার হিসেবেই মুক্তা বেশি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আপনি যে মুক্তাটি ব্যবহার করছেন সেটি আসল না নকল সেটি কি বুঝতে পারেন? দেখে নিন কীভাবে বুঝবেন কোন মুক্তটি আসল এবং কোনটি নকল।
১. কোনো মুক্তাকে যদি আপনি নখ দিয়ে ঘষা দেন তারপর যদি দেখেন মুক্তাটি দিয়ে গুঁড়ো পড়ছে। আবার মুছে দিলে মুক্তার গায়ে লাগা দাগটি মুছে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তোটির উজ্জ্বলতা ফিরে পাচ্ছে তবে সেটি আসল মুক্তা।
২. আবার,মুক্তা দিয়ে যদি কোনো কাঁচের উপর ঘষেন, যার ফলে যদি কাঁচে দাগ পড়ে যায়, তবে সেটি আসল মুক্তো নয়। আসল মুক্তা দিয়ে কাঁচে কখনো দাগ পড়বেনা।
৩. আসল মুক্তাকে গরম সময়ে ধরলে ঠান্ডা লাগবে। যেটা নকল মুক্তোর ক্ষেত্রে অনুভব করা যায়না। আসল মুক্তা নকল মুক্তোর থেকে অনেক হালকা হয়।
৪. আসল মুক্তা একটু উঁচু থেকে কাঠের উপরে ফেললে ধাতব শব্দ হয়।
বর্তমানে প্রাকৃতিক মুক্তা খুব একটা পাওয়া যায় না। এখন বেশীরভাগ মুক্তাই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই প্রাকৃতিকভাবে মুক্তা তৈরীর ঘটনা খুব দুর্লভ এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। প্রাকৃতিক মুক্তা তৈরী হয় যখন বাহ্যিক কোনো উত্তেজক পদার্থ প্রাকৃতিকভাবে ঝিনুকের অভ্যন্তরে আটকে যায়।
প্রাকৃতিকভাবে মুক্তা তৈরীর প্রক্রিয়া ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই গবেষকরা এখন কালচার ফার্মেই বাণিজ্যিকভাবে কৃত্রিম মুক্তা তৈরী করছেন। যদিও এই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ এবং কিছুটা জটিল। কাজেই বেশ গুরুত্বের সাথে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। আর এ কারণেই মুক্তার দামটাও কিছুটা চড়া হয়ে থাকে। তবে এই মুক্তাগুলো নির্দিষ্ট আকার আকৃতির হয়ে থাকে। অর্থাৎ কাঙ্ক্ষিত আকৃতির মুক্তা তৈরী করা যায় এই পদ্ধতিতে।