মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে মানুষ সবচেয়ে সেরা ও প্রিয় সৃষ্টি। মানুষকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সুবিধা দিতে কুরআন মাজিদে অনেক উপায় ও উপদেশ দেয়া হয়েছে। যেসব উপায় ও উপদেশ মেনে চললে বান্দার দুনিয়ার জীবনের সব কাজ সহজ হয়ে যায়। ক্ষমা ও জান্নাত লাভের সেরা আমল সাইয়িদুল ইস্তিগফার।
সুন্নাতের অনুসরণে এ ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কাঙ্ক্ষিত ক্ষমা প্রার্থনা করে আরও দুইটি নিয়মিত আমলে সুনিশ্চিত ক্ষমা ও জান্নাত পাবে মুমিন। উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য সহজ আমল ৩টি কী?
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট।’ সুতরাং গুনাহ থেকে মুক্তির মাধ্যমে ডান হাতে আমলনামা নিয়ে জান্নাতে যেতে একনিষ্ঠতার সঙ্গে এ ৩টি আমল করার বিকল্প নেই। যারা সহজ ৩টি আমল করবে তাদের জান্নাতে যাওয়া একেবারেই সহজ। বাধা হয়ে থাকবে শুধুই মৃত্যু। আর তাহলো-
১. সকাল-সন্ধ্যায় ‘সাইয়িদুল ইস্তিগফার’ পড়া
সাইয়িদুল ইস্তিগফার আল্লাহর এত চমৎকার প্রশংসায় ভরপুর যে, যদি কেউ নিজের গুনাহ মাফের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চায়; আল্লাহ ওই ব্যক্তি ক্ষমা করে দেন। হাদিসে এসেছে- ‘কেউ যদি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল ও সন্ধ্যায় সাইয়িদুল ইস্তিগফার পড়ে। আর এ দিন সে মারা যায়, আল্লাহর ইচ্ছায় সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)
সাইয়িদুল ইস্তিগফার
أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া কোনো প্রভু নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যমত তোমার কাছে দেয়া ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিগুলো পালনে সচেষ্ট আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমাকে যে নেয়ামত দান করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমি আমার পাপগুলো স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া কেউ ক্ষমাকারী নেই।’
২. নিয়মিত ‘সুরা মুলক’ পড়া
কোরআনুল কারিমের ২৯তম পারার প্রথম সুরা এটি। এ সুরাটি প্রতিদিন একবার পড়লে মুমিনের জান্নাত সুনিশ্চিত। দৈনন্দিন আমলের সুরাগুলোর মধ্যে এটি একটি। যা প্রতিদিন ইশার নামাজের পর পড়তে হয়। এ ছাড়াও যাদের সুরাটি মুখস্থ আছে, তারা চাইলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই এ সুরাটি তেলাওয়াত করতে পারে। নামাজে সুরা মুলক-এর আয়াতগুলো বুঝে বুঝে তেলাওয়াত করলে মুমিনের হৃদয়ে অন্যরকম এক আবহ তৈরি হয়। নামাজেও তৈরি হয় একনিষ্ঠতা।
সুরাটি বুঝে পড়লে মহান আল্লাহর স্মরণ, তার প্রতি ভয় সৃষ্টি এবং নেক কাজের আগ্রহ বেড়ে যায়। সুরা মুলক পড়ার মাধ্যমে নামাজ আদায় করলে দিনব্যাপী অগণিত খারাপ কাজের মাঝেও ভালো কাজ করার অন্যরকম অনুভূতি পাওয়া যায়।
যারা সুরাটির নিয়মিত পাঠ করেন, আল্লাহ তায়ালা তাদের কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা দেবেন। কেয়ামতের দিন সুরা মুলক তার তেলাওয়াতকারীকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
৩. নিয়মিত ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়া
প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর কোরআনুল কারিমের মর্যাদাপূর্ণ আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করা। এ আয়াতটি আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা ও মর্যাদায় ভরপুর। যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়ে, ওই ব্যক্তি ও জান্নাতের মাঝে এতোটুকু দূরত্ব থাকে যে, সে যেন শুধু মৃত্যুবরণ করছেনা বলেই (কবরে) জান্নাতের নেয়ামতগুলো উপভোগ করতে পারছেনা।
সুতরাং মুমিন বান্দার উচিত, সকাল-সন্ধ্যায় সাইয়িদুল ইস্তিগফার পড়া। দিনের যে কোনো সময় সুরা মুলক পড়া এবং প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার মাধ্যমে ক্ষমা ও জান্নাত পাওয়ার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সুনিশ্চিত ক্ষমা ও জান্নাত পেতে নিয়মিত সুন্নাতি ৩ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।