শেরপুরের শ্রীবরদী পৌরশহরের শতবর্ষী কাচারি নামে পরিচিত পুকুরটিতে শহরের সব ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে পুকুরটির ইতোমধ্যেই তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এতে পানি নিষ্কাশন বাধা পাওয়ায় শহরে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আবার পুকুরের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তবে এলাকাবাসীর দাবি- শতবর্ষী এ পুকুরটির চারপাশে গাইডওয়াল দিয়ে খনন করলে গোসল, মসজিদে যাতায়াতসহ অন্যান্য কাজ করতে পারবে এলাকাবাসী।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাজারের নালা-নর্দমা, বাসা-বাড়ি, হোটেল, দোকানপাটের ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানায় টইটম্বুর হয়ে আছে পুকুরটি। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক পানি চলাচল। আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে পুকুরের দূষিত পানি মসজিদের অজুখানাসহ লোকালয়ে উঠে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। পচা দুর্গন্ধে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পুকুর পাড়ের বাসিন্দারা। দুর্গন্ধময় পানিতে বিস্তার হচ্ছে মশার বংশ। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ মসজিদের মুসল্লি, ভূমি অফিস ও আশেপাশের বসবাসকারীরা। দূষিত বর্জ্যের দুর্গন্ধে আশেপাশের বাসা-বাড়ি ও নামাজে আসা মুসল্লিদের নাক চেপে থাকতে হয় প্রতিনিয়ত। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলমান থাকায় এখন কোনো রকমে বেঁচে আছে পুকুরটির একটু অংশ। পুকুরটিতে ময়লা ফেলার কারণে এবং সংস্কার না করায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আবার কিছু অংশ দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা।
মসজিদে আসা মুসল্লি রাজু মিয়া, আরেফিন, মানিকসহ অনেকে জানান, পুকুরটির পাশেই ভূমি অফিস। কিন্তু অফিস থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা সাধারণ মুসল্লি নাক চেপে মসজিদে যাই। দ্রুত এর সমাধান হোক এটাই আমরা চাই।
কাচারি মসজিদের ঈমাম আবু বক্কর সিদ্দিক খোকা বলেন, এখন অতিষ্ঠ হয়ে গেছি পানির দুর্গন্ধে। আগে দুর্গন্ধ কম ছিল, এখন বেশি। বিশেষ করে একটু বৃষ্টি হলেই পুকুরের পচা পানি অজুখানা উঠে আসে।
মসজিদের সভাপতি একেএম ওবায়দুর রহমান খায়ের মুন্সী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কিছু দোকানদার, হোটেল ও সেলুন ব্যবসায়ীরা এসব আবর্জনা ফেলে আসলেও তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা তা মানে না। সরকারিভাবে কিছু একটা করলে তা ঠিকই মানবে।
শ্রীবরদী বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মসজিদের মুসল্লি আলী হোসেন বলেন, দখলমুক্ত করে পুকুরটি খনন করে মাছ চাষ করলে লাভবান হবে সরকার। মিটবে স্থানীয়দের আমিষের চাহিদা।
পুকুরের পাশে বাড়িওয়ালা আল হেলাল ও হেলেনা বেগম বলেন, কতদিন থেকে এই অবস্থা, এটার কি কোনো ব্যবস্থা নাই? আমরা নাক চেপে বের হই, আবার নাক চেপেই আসি। বর্ষাকালে আসার মতো পরিস্থিতি থাকে না। দ্রুত সমাধান আশা করছি।
শ্রীবরদী পৌরসভার মেয়র আবু সাইদ বলেন, পুকুরটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করা দরকার। এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ আল ফারুক এ প্রতিবেদককে জানান, এই পুকুরটি উদ্ধার ও খনন করে এর চারপাশে গাইডওয়াল দিয়ে বিভিন্ন গাছপালা সবুজায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছি। দ্রুতই এর সমাধান হবে আশা করছি। দ্রুতই পুকুরটিতে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে ও দখলমুক্ত করে খনন করে চারপাশে গাইডওয়াল করবে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।