শেরপুরের শ্রীবরদীতে এক ক্বওমী মাদ্রাসার ছাত্রকে বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে পেটানোর অভিযোগ ওঠেছে অই মাদ্রাসার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে শ্রীবরদীর খরিয়াকাজীর চর ইউনিয়নের পূর্ব খরিয়া গ্রামের নূর হেরা নূরানী তালিমুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে আহত আসিফুলকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আসিফুল পূর্ব খরিয়া গ্রামের খলিলুর রহমান খোকনের ছেলে এবং ওই মাদ্রাসায় হেফজখানার ছাত্র।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষক। অভিযুক্ত শিক্ষক শেরপুর শহরের উত্তর গৌরীপুর এলাকার মো. আব্দুল্লাহর ছেলে হাফেজ মো. আমানুল্লাহ। ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত চান আসিফুলের স্বজনসহ মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আসিফের স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শ্রীবরদী উপজেলার পূর্ব খরিয়া গ্রামের খলিলুর রহমান খোকনের ছেলে আসিফুল ইসলাম বিজয় স্থানীয় নূর হেরা নূরানী তালিমুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়তো। আসিফ সম্প্রতি একদিন মাদ্রাসায় না যাওয়ার কারণে এবং আরেকদিন দেরি করে যাওয়ায় সোমবার দুপুরে ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হাফেজ মো. আমানুল্লাহ শিক্ষার্থী আসিফকে মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে বেত দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। এতে আসিফুলের ঘাড়ে ও পিঠে রক্তাক্ত জখম হয়ে যায়। পরে মাদ্রাসার অন্যান্য ছাত্রদের মাধ্যমে আসিফুলকে তার বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে আসিফুলের স্বজনরা তার শরীরের জখম দেখে তাকে দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আসিফুল ইসলাম বিজয় জানায়, সোমবার দুপুরে তাকে ডেকে নিয়ে শিক্ষক বেত দিয়ে মারতে শুরু করেন। অনেক অনুনয় আর কাকুতি-মিনতি করলেও মন গলেনি তার।
আসিফকে এমন বর্বরোচিত নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার ও শিক্ষককে দ্রুত গ্রেফতার চান আসিফুলের বাবা খলিলুর রহমান খোকন ও দুলাভাই শরাফত আলী। তারা বলেন, আসিফকে যে শিক্ষক নির্যাতন করেছে শুধু তারই বিচার চাই আমরা।
মাদ্রাসার বড় হুজুর মুফতি জাহিদুল ইসলাম শেরপুর টাইমসকে বলেন, আমি দুপুর থেকেই মাদ্রাসার কাজে শেরপুর শহরে ছিলাম। কাজ শেষ করে রাতে এসে এ ঘটনা জানতে পারি। জানার পর আমি আসিফের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি। আর অভিযুক্ত অই শিক্ষক মাদ্রাসা থেকে পালিয়েছে। আমি এ নির্মম ঘটনার বিচার চাই।
মানবাধিকার সংগঠন আমাদের আইন, শেরপুর জেলা শাখার চেয়ারম্যান নূর-ই-আলম চঞ্চল বলেন, ঘটনাটি শুনেই দ্রুত আমরা হাসপাতালে ছুটে আসি। একটি কিশোরকে এমন বর্বরোচিত নির্যাতন করার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
একই দাবি জানিয়েছেন সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির জেলা সভাপতি আলমগীর আল আমিন। তিনি বলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক থাকবে ভালবাসার। কিন্তু এখানে কিশোর আসিফকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন আহমেদ নূর বলেন, ওই মাদ্রাসা ছাত্রকে সোমবার রাত পৌণে ১০টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার পিঠে ও হাতে জখম রয়েছে। বর্তমানে সে জেলা সদর হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জানান, ঘটনাটি শুনেছি। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।