খাদ্যে উদ্বৃত্ত্ব শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে “নেক ব্লাস্টে” আক্রান্ত হয়েছে বোরো ফসল। এতে করে কৃষকদের বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের হাসি কেড়ে নিয়েছে, কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পরেছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে সংক্রমিত জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না কৃষকদের। ধান ক্ষেতের কোন এক অংশ থেকে শুরু হয় এই রোগের। এরপর মুহুর্তেই ছড়িয়ে পরে পুরো জমিতে। অন্যদিকে যেসব ধান ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট ছড়ায়নি সেসব ক্ষেতেও নিয়মিত স্প্রে করলেও কৃষকরা আতঙ্কে নির্ঘুম দিন কাটাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ১৬,৯০০ হেক্টর জমি নির্ধারিত হলেও মোট ১৭,১৮০ জমিতে ইরি-বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল উফসী জাতের ধান ১১,৬৮০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ধান ৬,৩৩০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। চারা রোপনের শুরুতে আবহাওয়া বোরো চাষের অনুকুলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছিলেন কৃষকরা। কিন্তু বর্তমানে ধান পাকা মাঝামাঝি সময়ে বৈরি আবহাওয়া, ঝড়, শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় আতংকে দিন কাটছে চাষিদের। তার উপর ব্রী-২৮ ও ব্রী-২৬ জাতের ধান ক্ষেতে শীষ আসার পরে নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে ধানের শীষ। এতেকরে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পরেছে, মুখে নেই হাসির ঝিলিক।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ধান ক্ষেতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে শত শত হেক্টর জমির ব্রী-২৮ ও ব্রী-২৬ জাতের ধান ক্ষেত নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ মরে গেছে। ধানের ক্ষেতগুলো দুর থেকে পাকা মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায় ধানের শীষ মরে গেছে। রানীশিমুল ইউনিয়নের টেংগর পাড়া গ্রামের কৃষক ফিরোজ, মোকারম, ফকির মাহমুদ, সুরুজ্জামান, মুজিবর রহমান, আসান্দি পাড়া গ্রামের মোজাফর, আলমাছ, কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের হরিণাকান্দা গ্রামের আবুল কালামসহ অনেকেই জানান, ব্রী-২৮ ও ব্রী-২৬ জাতের ধান ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে জমির ধান মরে গেছে।
টেংগর পাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ জানান, ঋণ করে ৫ কাঠা জমিতে ব্রী-২৮ ধানের চাষ করেছিলাম। ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ক্ষেতের পুরুটাই মরে গেছে। এখন এ মরা ধান গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনে উপায় নাই।
উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হাসান জানান, বর্তমান মৌসুমে সারা দেশের মত শ্রীবরদীতেও নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্রী-২৮ ও ব্রী-২৬ জাতের ধানে এ রোগের আক্রমণ হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে মুলত এ রোগের আক্রমণ হয়েছে। নেক ব্লাস্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কৃষকদেরকে জিল, নাটিভো, ট্রপারের সাথে কুইক পটাশ মিশিয়ে ধান ক্ষেতে স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নেক ব্লাস্টে ধানের ক্ষতি হলেও উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জণ করা সম্ভব হবে। কারণ আমাদের উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড ধানের আবাদ বেশি হয়েছে।