শেরপুরের শ্রীবরদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশে ফেলে যাওয়া জুতার সূত্র ধরে ‘ক্লু-লেস’ হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করে জড়িত ১২ জনের মধ্যে তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার (১৯ আগস্ট) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আমিনুল ইসলাম। হত্যায় জড়িত গ্রেফতারকৃতরা হলো- শ্রীবরদীর সাগর (২০), বিল্লাল মিয়া (২৫) ও সাইম মিয়া (১৮)। নিহত অটোরিকশা চালক আনসার আলী শেরপুর সদর উপজেলার উত্তর নৌহাটা তাতালপুর এলাকার বাসিন্দা।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন গত ২৮ জুলাই সদর উপজেলার তাতালপুর বাজার থেকে আনসার আলীর অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে কালিবাড়ি বাজারে যায়। সেখানে পৌঁছে ভাড়া কম দিতে চাইলে আনসার আলী নিতে অস্বীকৃতি জানান। এসময় তারা আরেকটু এগিয়ে দিতে বলে এবং সেখানে তাদের লোকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দিবে বলে জানায়। পরে কালিবাড়ি থেকে কুরুয়া সড়কে যাওয়ার পথে শৈলার বিলের মাঝামাঝি বড় ব্রিজের কাছে এসে আনসার আলীর সাথে দূর্ব্যবহার শুরু করে তারা। একই সময় সেখানে অবস্থান করা অপর সহযোগীরা আনসার আলীকে উপর্যুপরী কিল-ঘুষি মেরে পকেটে থাকা টাকা কেড়ে নেয় ও তাদের মধ্যে একজন আনসার আলীর গলা চেপে ধরে ধাক্কা দেয়। এতে আনসার আলী ব্রিজ থেকে পানিতে পড়ে জ্ঞান হারান। তখন আসামিরা আনসার আলীকে পানিতে চুবিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং তার শার্ট-লুঙ্গী খুলে মৃতদেহ বিলের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখে।
পরে ২৯ জুলাই বিকেলে শ্রীবরদী উপজেলার শৈলারকান্দা গ্রামের শৈলা বিল থেকে অটোরিকশা চালক আনসার আলীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশ থেকে নিহতের পায়ের একজোড়া ও তার পাশে আরও একজোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আনসার আলীর স্ত্রী জরিনা বেগম অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে শ্রীবরদী থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ জুতা ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্ত করে। শনাক্ত হওয়া সাগরকে সন্দেহের তালিকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াও সাগরের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারের কললিস্ট পর্যালোচনা করে ঘটনার দিন ও সময়ে তার অবস্থান ঘটনাস্থলে ছিল বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। একপর্যায়ে গত ১৭ আগস্ট সাগরকে পুলিশি হেফাজতে নিলে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ও জড়িতদের নাম প্রকাশ করে। পরে তারই দেওয়া তথ্যমতে জড়িত বিল্লাল মিয়া (২৫) ও সাইম মিয়াকে (১৮) গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তরা বুধবার শেরপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।