শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মানিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই ইউনিয়নের ১০ জন ইউপি সদস্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার বরাবর এ অনাস্থা প্রস্তাব দেন। প্রায় তিন মাস হলেও এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর সমাধান হয়নি।
এতে ইউপি সদস্যরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবি তুলে শনিবার ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিকদের নিকট এসব তথ্য তুলে ধরেন। এদিকে প্যানেল চেয়ারম্যান-ইউপি সদস্যদের দ্বন্ধ্বে ব্যাহত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার ৮ নং খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম পদত্যাগের পর প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম মানিক। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তুলেন ইউপি সদস্যরা। অভিযোগে বলা হয় ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর বরাদ্দকৃত ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। প্রায় ১ বছর যাবত মাসিক মিটিং ছাড়াই বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ভিজিডি চালের তালিকা তৈরিতে টাকা নিয়ে নাম সংযুক্ত করেছেন। সম্প্রতি কোন ইউপি সদস্যকে না জানিয়ে মনগড়াভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ডের লোকদের ভিজিডি কার্ডের অনলাইন আবেদন করান। এনিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের মানিকের সাথে ইউপি সদস্যদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। পরে ভিজিডি’র তালিকা সমন্বয় করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তারের নির্দেশে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বৃহস্পতিবার যান ইউনিয়ন পরিষদে।
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা উমর ফারুক বলেন, আমার ছোট বোনের জন্মনিবন্ধন কার্ডের জন্যে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান ১ হাজার টাকা ফি দাবি করেন। বিল্লাল হোসেন জানান, আমি ভ্যানগাড়ী চালক। জন্মনিবন্ধনের জন্য তিনি সাড়ে ৭শ টাকা ফি দাবি করেন। ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন ননী বলেন, প্রায় ৩ মাস আগে আমরা সকল ইউপি সদস্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও বক্তব্যে ইউপি সদস্য শরাফত আলী, নয়ন মিয়া, নুর আমিন, সাইফুল ইসলাম, ফারুক মিয়া, সোবহান আলী, আজিজুল হক, নাজমা বেগম ও মিতালী বেগম বক্তব্যে প্যানেল চেয়ারম্যানের নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করেছি। কোন প্রকার অনিয়ম-দূর্নীতি করি নাই। ভিজিডি’র তালিকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এলাকার হতদরিদ্ররা অনলাইনে নিজ উদ্যোগে আবেদন করেছে। এব্যাপারে কিছুই জানি না।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) মনজুর আহসান বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্তপূর্বক বিশেষ সভার কমিটির রেজুলেশনের সিদ্ধান্ত ও অন্যান্য কাগজপত্র সরকারের উর্দ্ধতন দফতরে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার বলেন, অনাস্থার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অনাস্থার বিষয়টি দীর্ঘদিন পেরিয়ের গেলেও কেন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।