তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রানিশিমূল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা বাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে। আহত হয়েছেন নারীসহ ৭জন। এদের মধ্যে ৩ জন শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। তারা হলেন- বিশ^নাথের ছেলে ক্ষীরমোহন, হীরালালের ছেলে সজল (২০) সজলের মা ফুলমতি (৪৫)।
রোববার (২২ আগস্ট) রাতে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। থানার ওসি, উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শণে যান। এ ঘটনায় সোমবার (২৩ আগস্ট) ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান আক্রান্ত হিন্দু পরিবারের সদস্যদের দেখতে যান। এদিন শ্রীবরদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভায়াডাঙ্গা বাজারে সরকারী খাস জমিতে উত্তরাধিকার সূত্রে শত বছর ধরে বসবাস করে আসছে রাজভর সম্প্রদায়ের কিছু পরিবার। জমিদার আমলে তাদের সেখানে থাকতে বলা হয়। বর্তমানে ১২ ঘর পরিবার সেখানে বসবাস করে। এরা সহজ, সরল এবং দরিদ্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন- তহসিল অফিসের সামনে দিয়ে সরকারী জায়গায় যাতায়াতের একটি কাঁচা সড়ক রয়েছে। সড়কের পাশেই রয়েছে একটি মন্দির। বৃষ্টি হওয়াতে সড়কে গর্ত হয়ে হয়ে পানি জমে। রোববার কয়েকজন ছেলে কুদাল দিয়ে মাটি কেটে তহসিল অফিসের পিছন দিয়ে পানি বের করে দেয়। যাতে পানি সড়কের বাইরে চলে যায়। ওই সড়ক দিয়ে মোটর সাইকেলে যাচ্ছিলেন হাছেন মিয়ার ছেলে এরশাদ। সে পানি বের করা নিয়ে ছেলেদের সাথে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে এবং চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর তাঁর বাবাসহ ২০-৩০ জন কে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে এবং লাঠিসোটা দিয়ে হিন্দুদের উপর হামলা করে। এসময় মন্দিরের প্রতিমা এবং আসন্ন দুর্গাপূজার জন্য প্রস্তুত প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলা হয়। ঘরে ঘরে গিয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেয় এরশাদ। ভয়ে আতঙ্কে উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি সুশান্ত সোম মনাকে ফোনে ঘটনা জানায় তারা। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাতে থানার ওসি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, হিন্দু,বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে যান।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে। থানায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শ্রীবরদীর ইউএনও নিলুফা আক্তার বলেন- ওই জায়গাটি সরকারের। সড়ক নিয়ে অন্য কারো কথা বলা অন্যায়। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে শান্তিতে থাকতে পারে তাঁর জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ঘটনাটি দুঃখজনক।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক কানু চন্দ্র চন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, একসময় শ্রীবরদীর প্রত্যন্ত গ্রামে প্রচুর হিন্দু ছিল। অত্যাচারে তারা গ্রাম ছেড়েছে। তিনি ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টা›তমূলক শাস্তির দাবী করেন। নইলে কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।