‘বাপুরে, ব্রিজের উপরে চড়লে আত্মা চরত (আতঙ্কিত) করে উঠে। কখন যে ভেঙে যায়। তবু কী আর করার, আত্মা হাতে নিয়েই পারাপার করতে হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব জুলহাস আলী। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কাজিরচরের খড়িয়া গ্রামের মৃগী নদীর ওপর সেতু সম্পর্কে বলছিলেন তিনি। সেতুটি দেবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ১০ গ্রামের অন্তত ২৫ হাজার বাসিন্দা। জনপ্রতিনিধিদের বারবার আশ্বাসে কাজ না হওয়ায় হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার হেরুয়া, বালুরঘাট, কাজিরচর, খড়িয়াপাড়া, লংগড়পাড়া, ভাটি লংগড় পাড়া, নামাপাড়া, আইলারপাড়া, ঝিনিয়া, বীরবান্ধা ও উলুকান্দা এলাকার বাসিন্দারা চলাচল করে এ সেতু দিয়ে। সেতুটির দুটি পিলার দেবে গেছে অনেক আগেই। পরে আরও চারটি পিলার দেবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুর ওপরের কংক্রিটের ঢালাই উঁচু-নিচু হয়ে গেছে। দূর থেকে দেখতে আঁকাবাঁকা মনে হয়। চলাচলের বিকল্প পথ না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই এ সেতু দিয়ে তাদের পারাপার হতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ওপরের অংশ হয়ে গেছে আঁকাবাঁকা। সেতুটি দিয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, সাইকেলসহ হালকা যানবাহন। ট্রাক, ট্রলিসহ পণ্য পরিবহনের কোনো যানবাহনই যেতে পারছে না। এ পথে চলাচল করা অন্তত ১০ গ্রামের কৃষকরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ নানা সময় মাপজোখ করে গেলেও সেতুটি পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘এই নদীর বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ধানের আবাদ করি। কিন্তু ঠিকমতো গাড়ি আসতে পারে না বলে আমাদের জিনিসের দামও পাই না। বাজারেও ঠিকমতো তুলতে পারি না। অনেক দিন হয়ে গেল ব্রিজ নির্মাণে কোনো উদ্যোগই দেখছি না। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত এ ব্রিজটা চাই।’
খড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়, লংগড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লংগড়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
খড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সবুজ মিয়া বলেন, ‘এ সেতু দিয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে গেছে আরও এক যুগ আগে। বিকল্প পথ না থাকায় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছে। দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
কাজিরচরের সাবেক ইউপি সদস্য মানিক মিয়া বলেন, ‘আশপাশের আট-দশ গ্রামের মানুষ কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে এ ব্রিজটা পার হয়। অনেকদিন হলো ব্রিজটির এমন অবস্থা। কিন্তু সংস্কারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’
শেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু করা হবে।’