দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শেরপুর-ময়মনসিংহ সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত হচ্ছে। এরমধ্য দিয়ে একদিকে যেমন প্রান্তিক ও সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা ও দুর্ভোগের অবসান ঘটবে, অন্যদিকে এ জেলার অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামষ্টিক উন্নতির পথ আরও প্রশস্ত হবে। রাজধানী ও বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের সঙ্গে শেরপুরের লাখ লাখ মানুষের চলাচল সহজ ও গতিময় হওয়ার পাশাপাশি দূর-দূরান্তের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান গারো পাহাড়ের পাদদেশে পর্যটনন সুবিধার আরও বিকাশ ঘটবে। এছাড়া ঢাকা থেকে সবচেয়ে কম ২শ’ কিলোমিটার দূরত্বের ভারতীয় সীমান্তে ইমিগ্রেশনসহ নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধনও সুদৃঢ় হবে।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর ৮০’র দশক পর্যন্তও ছিল না শেরপুর-ময়মনসিংহ ভায়া ফুলপুরে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। পরবর্তীতে ৯০ দশকের শুরুতে শেরপুর ময়মনসিংহ সংযোগস্থলে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর চীন-মৈত্রী ব্রিজসহ (শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ) শেরপুর-ময়মনসিংহ সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা এবং তার মাধ্যমে রাজধানী
ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যাতায়াতে সূচিত হয় নতুন দিগন্ত। এরপর থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাতায়াত বাহন গাড়ি বেড়ে গেলেও সড়ক প্রশস্ততার অভাবে যানজটসহ নানা সমস্যায় প্রতিদিন এই পথে যাতায়াতকারী লাখো যাত্রী সাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই দুর্ভোগ লাঘবে দীর্ঘদিন থেকেই শেরপুর-ময়মনসিংহ সড়কটি ফোর লেনসহ জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার দাবি উঠে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের এক সভায় ময়মনসিংহ (রঘুরামপুর)- ফুলপুর-নকলা-শেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৩৭১) নামে বৃহৎ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, এই প্রকল্পের আওতায় শেরপুর-ময়মনসিংহ ভায়া ফুলপুর-নকলা আঞ্চলিক মহাসড়কটি ফোরলেনের কাছাকাছি প্রায় ৩৬ ফুট প্রশস্ত করা হবে। এরমধ্যে শেরপুর সড়ক বিভাগের আওতায় ৩০.৪০ কি.মি. ও ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগের আওতায় ৩৭.৮৬ কি.মি. সড়কসহ মোট ৬৮.২৬ কি.মি. সড়ক রয়েছে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
ময়মনসিংহ বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান বলেন, শেরপুর-ময়মনসিংহ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ এবং প্রতীক্ষার অবসান হলো। সেসঙ্গে তিনি দ্রুততম সময়ে মানসম্পন্নভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের যাতায়াত সহজ হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে
আঞ্চলিক মহাসড়কটি ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
শেরপুর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ, বলেন, এখন পদ্ধতিগত ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় নেয়া হবে। আশা করছি পরবর্তী এক’দুই মাসের মধ্যে ফান্ড বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সড়কের দু’পাশের গাছপালা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পাশাপাশি দরপত্র আহ্বান করা হবে।