স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনার আওতায় বিচার বিভাগে এবার অনলাইন কজলিস্ট বা ই-কার্যতালিকা ব্যবস্থা চালুর বদৌলতে শেরপুরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির সকল মামলার তথ্য এখন আদালতে না এসে ঘরে বসেই বা দেশ-বিদেশের যেকোন জায়গা হতে জানা যাচ্ছে। | https://causelist.judiciary.gov.bd বা ‘আমার আদালত’ অ্যাপ ((Google play store) ) হতে জানা যাচ্ছে সকল বিচারিক আদালতের ওইসব তথ্য। ফলে বিচারপ্রার্থী মানুষ, আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মামলার তথ্য জানার সুযোগ এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এতে ঘরে বসেই সহজেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার মামলার তথ্য জানতে পারছেন। বিষয়টি সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনার এক অনন্য সাফল্য বলেই ভাবছেন অভিজ্ঞ মহল।
জানা গেছে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনার আওতায় সরকার বিচার বিভাগের অধিনে দেশের আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে বিচারপ্রার্থী মানুষের সুবিধার্থে অত্যন্ত সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারই আওতায় সরকারের অংঢ়রৎব ঃড় ওহহড়াধঃব (ধ২র) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে ২০২২ সালের জুন মাস হতে ৭ টি জেলায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোতে ড়হষরহব ঈধঁংবষরংঃ (ই-কার্য তালিকা) ব্যবস্থা চালু করা হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর একজন করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে ঢাকায় বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ওই প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর থেকে প্রথমভাগেই মোট ৭ টি জেলার মধ্যে শেরপুরেও ড়হষরহব ঈধঁংবষরংঃ (ই-কার্য তালিকা) চালু করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসান ভূঁইয়া টিওটি হিসেবে প্রতিদিন মনিটরিং করে শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধিন সকল আদালতের বিচারিক (ট্রায়াল) মামলার পাশাপাশি প্রত্যেক আমলী আদালতগুলোর সকল মামলার তথ্য অনলাইন কজলিস্ট বা ই-কার্য তালিকায় ইনপুট করছেন। আর এর মধ্য দিয়ে শেরপুর বিচার বিভাগের সকল আদালতের ই-কার্যতালিকা https://causelist.judiciary.gov.bd বা ‘আমার আদালত’ অ্যাপ (Google play store) লিংকে ক্লিক করে বিভাগ, জেলা আদালতের নাম ও তারিখ বাছাই করে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করলে ঘরে বসেই সংশ্লিষ্ট যে কোন ব্যক্তি ঘরে বসেই জানতে পারছেন তার প্রয়োজনীয় বা চাহিদা মোতাবেক মামলার পরবর্তী তারিখ, কার্যক্রম, রায় ও আদেশ সম্পর্কে। এছাড়া ওই লিংকে ক্লিক করার পর উপরে ডান পাশে থাকা ‘মামলা অনুসন্ধান করুন’ বাটনে ক্লিক করে বিভাগ, জেলা আদালতের নাম এবং মামলার নম্বর ও সাল দিয়ে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করলে মামলার বিস্তারিত তথ্যও জানা যাচ্ছে। তাছাড়া ‘চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, শেরপুর’ ফেইসবুক পেইজেও প্রতিদিনের মামলার তথ্য উল্লেখিত লিংকসহ নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে বিধায় সেখান থেকেও জানা যাচ্ছে সহজেই।
শেরপুর জুডিসিয়াল আদালতসমূহের মামলার কার্য তালিকা দৃষ্টে দেখা যায়, এদিন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) এস.এম হুমায়ুন কবিরের বিচারিক আদালতে চার্জ শুনানীর জন্য ১৪টি ও সাক্ষীর জন্য ১৫টি মামলার তারিখ ধার্য্য ছিল। অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) মোঃ সালামত উল্লাহর বিচারিক আদালতে চার্জ শুনানীর জন্য ১টি, সাক্ষীর জন্য ১৬টি, সাফাই সাক্ষীর জন্য ১টি ও আপীল শুনানীর জন্য ২টি মামলার তারিখ ধার্য্য ছিল। একইভাবে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-(১ম আদালত) ফারিন ফারজানার বিচারিক আদালতে চার্জ শুনানীর জন্য ৭টি ও সাক্ষীর জন্য ৯টি মামলা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (২য় আদালত) মোহাম্মদ আল মামুনের বিচারিক আদালতে চার্জ শুনানীর জন্য ২টি ও সাক্ষীর জন্য ১৮টি মামলা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (৩য় আদালত) মোঃ হাসান ভূঁইয়ার বিচারিক আদালতে চার্জ শুনানীর জন্য ১টি, সাক্ষীর জন্য ১৫টি ও রায় প্রচারের জন্য ১টি মামলা, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (১ম আদালত) শরিফুল ইসলাম খানের বিচারিক আদালতে চার্জ শুনানীর জন্য ৭টি ও সাক্ষীর জন্য ১২টি, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (২য় আদালত) মো. মেহেদী হাসানের বিচারিক আদালতে চার্জ শুনানীর জন্য ৪টি, সাক্ষীর জন্য ১২টি ও যুক্তিতর্ক শুনানীর জন্য ১টি মামলা, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (৩য় ও ৪র্থ আদালত) নূর-ই-জাহিদের বিচারিক আদালতে যথাক্রমে চার্জ শুনানীর জন্য ৩টি ও সাক্ষীর জন্য ১০টি মামলা এবং চার্জ শুনানীর জন্য ৪টি, সাক্ষীর জন্য ১০টি, রায় প্রচারের জন্য ১টি মামলার তারিখ ধার্য্য ছিল। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ দমন (দ্রæত বিচার) এর দায়িত্বে থাকা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারিন ফারজানার বিচারিক আদালতে প্রতিবেদনের জন্য ২টি ও সাক্ষীর জন্য ১টি মামলা এবং বন আদালতের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম খানের বিচারিক আদালতে প্রতিবেদনের জন্য ১টি ও সাক্ষীর জন্য ২টি মামলার তারিখ ধার্য্য ছিল।
এদিকে, অনলাইন কজলিস্টে ঘরে বসেই শেরপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির মামলার সকল তথ্য হাতের মুঠোয় চলে আসার বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির নাজির মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী শেরপুর পরিদর্শনকালে এখানকার ম্যাজিস্ট্রেসিতে মামলা নিষ্পত্তির হার ১৪২ শতাংশ হওয়ায় ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, ‘শেরপুরে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে সারাদেশে এমনটি করতে পারলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ইনশাল্লাহ মামলার জটকে আমরা সহনশীল পর্যায় আনতে পারবো’। সেই সাথে তিনি (মাননীয় প্রধান বিচারপতি) অনলাইন কজলিস্টের ক্ষেত্রেও শেরপুর সফল হবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
সিজেএম কোর্টের সিনিয়র এপিপি আলহাজ¦ মো. মাজদুল হক মিনু বলেন, শেরপুর ম্যাজিস্ট্রেসির সকল মামলার তথ্য এখন কোন বিচারপ্রার্থী (বাদী/আসামী) আদালতে না এসে ঘরে বসেই অথবা দেশ-বিদেশের যেকোন জায়গা হতেই জানতে পেরে খুবই উপকৃত হচ্ছেন। একই কথা জানান এসিজেএম কোর্টের এপিপি মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান রোকন। তারা দেশের বিচারপ্রার্থী মানুষের সুবিধার্থে অত্যন্ত সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারকেও ধন্যবাদ জানান। রবিবার দুপুরে আদালত অঙ্গনে গেলে কথা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বিচারপ্রার্থী লোকজনের সাথে।
এদিন এসিজেএম আদালতে আসা নালিতাবাড়ীর বিচারপ্রার্থী নূরনবী মিলন জানান, সাম্প্রতিককালে চালু হওয়া অনলাইন কজলিস্টের সুবাদে ঘরে বসেই নিজের টাচ মোবাইলের মাধ্যমে আমার মামলার তারিখসহ পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারছি। এতে আমাদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। মামলার তারিখ ও অবস্থা সম্পর্কে জানতে নানা দুর্ভোগেরও অবসান হয়েছে। একই কথা জানান পৃথক-পৃথক আদালতে আসা শেরপুর সদরের বিচারপ্রার্থী শাপলা আক্তার ও ছামিদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন।
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার বলেন, ভয়াবহ করোনা মহামারির সময়ে সারাদেশে বিচার বিভাগে যখন প্রায় অচলাবস্থা নেমে এসেছিল, ঠিক তখনও শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম হুমায়ুন কবিরের সাহসিকতা ও প্রাজ্ঞতায় ভার্চুয়াল শুনানীতে স্থানীয় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির কোর্ট পরিচালনায় শতভাগ সাফল্য আসে। সেইসাথে সারাদেশে শেরপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। শুনেছি বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে গেলে শেরপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ভূয়সী প্রশংসাও পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনার আওতায় শেরপুরকে অনলাইন কজলিস্ট প্রজেক্টে প্রথমেই অন্তর্ভুক্ত করায় সিজেএমের নেতৃত্বে কোভিডকালীন সাফল্যের মত অনলাইন কজলিস্ট কার্যক্রমেও শেরপুরে শতভাগ সাফল্য দেখা দিয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
একই কথা জানিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম.কে মুরাদুজ্জামান, সাবেক সভাপতি এ.কে.এম মোছাদ্দেক ফেরদৌসী ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মুন্না বলেন, সিজেএম এস.এম হুমায়ুন কবির শেরপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরতে স্বপ্ন দেখেন ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে সচেষ্ট থাকেন। তার সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের কারণেই অনলাইন কজলিস্টসহ শেরপুর ম্যাজিস্ট্রেসির সকল কার্যক্রমে প্রতিনিয়ত সফলতা বয়ে আনছে। সেইসাথে বিচারপ্রার্থী মানুষের একটি বড় অংশ ঘরে বসেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে তার মামলার তারিখ ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে সহজেই জানতে পারছেন। এতে তাদের মামলার তারিখ সংগ্রহকে কেন্দ্র করে এখন আর নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। এজন্য তারা শেরপুর বার ও বিচারপ্রার্থী মানুষের পক্ষ হতে শেরপুরের সিজেএম ও তার টিমকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।