শেরপুর জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ রজনীগন্ধায় আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এটিএম কামরুল ইসলাম ।
এ সময় তিনি সাম্প্রতিক বন্যায় শেরপুর জেলায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনের পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের ঋণ সহায়তা প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেন। সেইসাথে তিনি বন্যায় প্রাণহানির শিকার ১৪ জনের পরিবারের প্রতি সরকারের তরফ থেকে সমবেদনা প্রকাশ করে তাদের সহায়তা প্রদানসহ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সকল বিভাগের সমন্বয় নিশ্চিত করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বন্যাপরবর্তী সার্বিক কর্মকা- তদারকি করতেও তাগিদ আরোপ করেন।
সভায় জানানো হয়, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার ৫২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩০টি বন্যাকবলিত ইউনিয়নে কৃষি, মৎস্য, প্রাণীসম্পদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সড়ক যোগাযোগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন বীজতলা, সবজি, আউশ আবাদ, পাট ও ফলবাগান বিনষ্ট হয়ে প্রায় ৩০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলায় ৩ হাজার ১৩২টি মৎস্য খামার, পুকুর ডুবে ও পাড় ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪০৬ জন চাষী। আর মাছ ও পোনা ভেসে গিয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আর জেলায় ১৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫টি মাদ্রাসা ও একটি কলেজসহ ২৪টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীনের উপক্রম হয়ে পড়েছে।
এছাড়া উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় পরিচালিত আরও ২২টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষের হাঁস-মুরগী মরে ও খামার ভেসে প্রাণী সম্পদ বিভাগের আওতায় ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। আর বন্যায় প্রাণহানি হয়েছে ২৫টি গবাদি পশুর। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ৩৭৯টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পোড়ার দোকান এলাকায় কজওয়েসহ পাকা-কাঁচা মিলে এলজিইডি ও সওজ বিভাগের আওতায় বেশ কিছু রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ১২শ মানুষ স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। সাপে কাটার কোন ঘটনা না ঘটলেও বন্যার পানিতে ডুবে ৯ শিশু ও বজ্রপাতে ১ জনসহ ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সভায় আরও জানানো হয়, বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে জেলা প্রশাসনের আওতায় ইতোমধ্যে মোট ১০৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ দেড় লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এলাকাগুলোতে ৫২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তারা বিনামূল্যে দুর্গত মানুষের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও ঔষধ বিতরণ করছে। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তরফ থেকেও দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌছে দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৫টি।
জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) এটিএম জিয়াউল ইসলাম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এএইচএম আব্দুর রউফ, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রহিম বাদল প্রমুখ। সভায় ৫ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণসহ জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।