গারো পাহাড় ঘেঁষা শেরপুর জেলাজুড়ে রাসেলস ভাইপার সাপ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্টারনেট হতে নেওয়া একটি ছবি শুক্রবার (২১ জুন) এবং শনিবার (২২ জুন) দিনব্যাপী ঘুরছে। শেষে জানা গেছে নিছক গুজব এটি।
অন্য কোথাকার ছবি ইন্টারনেট হতে নিয়ে বলে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গুজবটি ছড়ান।
শুক্রবার সকাল থেকে কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে সাপ নিয়ে পোস্ট করা হয়। এতে সচেতন নাগরিকরা কমেন্টে এসব পোস্ট করা হতে বিরত থাকার অনুরোধ করেন।
এসব পোস্টে জেলার একশ্রেণির লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাহিদুল হক মনির জানায়, শেরপুরে রাসেলস ভাইপার পাওয়ার তথ্য সঠিক নয়। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলে এটা গুজব। অন্য জায়গার ঘটনা শেরপুরের বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শেরপুর ইয়ূথ রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান রাব্বী জানান, আমরা বাঙালিরা কিছু পারি আর না পারি, ফেসবুক যেহেতু তাহলে লিখতে সমস্যা কোথায়, সত্য-মিথ্যা যাচাই করি না। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম নীতি রয়েছে। রাসেল ভাইপারের ঘটনাটি গুজব মাত্র। রাসেল ভাইপারের অবস্থান শেরপুরে আছে; এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য নেই। যে ছবিটি ছড়িয়েছিল, তা ইন্টারনেট হতে নেওয়া।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন জানান, শেরপুরে রাসেলস ভাইপার পাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। মূলত এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটি ইন্টারনেট হতে নেওয়া।
তিনি আরও বলেন, সাপ একটি নিরীহ প্রাণী। জীবন ঝুঁকিতে পড়লেই ছোবল মেরে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করে। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এ পারিবেশবাদী নেতা।
সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ আদনান আযাদ জানান, এটা আমাদের দেশী সাপ। এর চেয়ে অনেক বিষধর সাপ গোখরা, কেউটে/ কালাচ আমাদের বাড়ির আশপাশেই বাস করে। কিছু ব কলম রাম ছাগল তা জানে না বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে হাইপ তুলতে পারেনি। রাসেলস ভাইপার অবশ্যই বিষধর সাপ ও এর বিষ মানুষের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু ফেসবুকে যেভাবে একে রাক্ষসের মতো বিশাল ভয়ঙ্কর হিসাবে প্রেজেন্ট করা হচ্ছে ততটা ভয়ংকর এরা না। এর কোনো পাখা নেই যে আপনাকে উড়ে এসে কামড় দিবে। যে কোনো গর্তে, ঝোপঝাড়ে হাত ঢুকানোর আগে সেখানে কিছু লুকিয়ে আছে কিনা তা চেক করে হাত ঢুকাবেন। এরা যেহেতু গ্রাউন্ড স্নেক, তাই জমিতে কাজ করার সময় গাম বুট পড়ে কাজ করতে হবে। কোনো সাপ দেখলেই পালোয়ানী দেখাতে তা ধরতে ও মারতে যাবেন না। এতে কামড় খাবেন।
মনে রাখবেন সচেতনতাই আমাদের একমাত্র রক্ষাকবচ। যে কোনো সাপের কামড় খেলেই দ্রুত জেলার প্রধান সরকারি হাসপাতালে যাবেন। ওঝা-কবিরাজের কাছে গিয়ে মইরেন না। কারণ এই ওঝা, কবিরাজরা সাপের কামড় খেলে নিজেরায় বাচার জন্য হাসপাতালে ছুটে।
রাসেলস ভাইপার আপনার বাড়িতে এসে বিছানায় উঠে কামড়ানের চান্স কম। জমিতে বা মাঠে ঘাটে ভুল করে আপনার পা এর গায়ে উঠে গেলে যে কোনো সাপই আপনাকে কামড় দেবে। এমন কি আপনার বাড়ির পোষা কুকুর বিড়ালের লেজে আপনি পাড়া দিলেও ঘুরে আপনাকে কামড় বসিয়ে দিবে।
সাপের কোনো শখ নাই মানুষকে কামড়ানোর। এটা ওদের ডিফেন্স মেকানিজম। শুধুমাত্র ভয় বা আঘাত পেলেই সাপ কামড় দেয়।