শেরপুর জেলা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে মহান বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে পুলিশ বাহিনীর সদস্য ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধিত করা হয়েছে। জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় “বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা সমাবেশ। সভায় সভাপতিত্ব করেন শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম।
সভার শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ মানুষের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে রজনীগন্ধা ফুল ও সম্মাননার ক্রেষ্ট তুলে দেন জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) মাহমুদুল হোসেন ফেরদৌসের সঞ্চালনায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক ও নকলা সাইলাম পুরের বাসিন্দা মহর উদ্দিন। তিনি আবেগ আপ্লুতকন্ঠে বলেন, দেখতে দেখতে যুদ্ধের ৪৮ বছর কেটে গেছে। অনেক সংবর্ধনা নিয়েছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এই প্রথম পেলাম। পুলিশ সুপারের এমন আয়োজন আমাকে মুগ্ধ করেছেন।
ওই মুক্তিযোদ্ধা বলেন “১৯৬৮ সালে আমি পুলিশে যোগ দেই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ আমি রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলাম। রাজারবাগের মতো রাজশাহীতেও পাক হানাদার বাহিনী পুলিশের ওপর হামলা করে। ওইদিন আমার ডিআইজি সালাউদ্দিন আহম্মেদ, এসপি আব্দুল মজিদকে হত্যা করা হয়। হত্যার প্রতিশোধ নিতে এবং দেশ মাতৃকাকে বর্বর পাক বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করতে যুদ্ধে অংশ নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক দিয়েছেন। শেষ জীবনে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের রেশনের ব্যবস্থা করলে আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মুক্তিযোদ্ধা নওজেস আলী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৫ বছর বয়সে যুদ্ধে অংশ নেই। আমার চোখের সামনে আমার তিন বন্ধুকে ধরে নিয়ে একটি ব্রীজের ওপর নিয়ে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলার জন্য হুকুম দেয় পাক বাহিনীর কমান্ডার। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমার এক বন্ধু ওই কমান্ডারের মুখে থুতু দিয়ে চিৎকার করে বলেন, জয়বাংলা। সাথে সাথে ব্রাশ ফায়ার করে ৩ জনকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এসব মনে হলে এখনো বুক ফেঁটে যায়। আজকের ছেলে মেয়েরা ভাবতেও পারবে না যে, দেশের জন্য আমাদের কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। কত রক্ত দিতে হয়েছে।
কৃতজ্ঞতা সমােেবশ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. বিল্লাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নকলা- সদর সার্কেল) মো. আমিনুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম প্রমূখ।
এসময় পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া অত্যন্ত আনন্দ ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। তিনি বলেন, আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ছাড়া, শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ছাড়া অন্য কিছু দেওয়ার মত সামর্থ্য আমাদের নেই। তাদের যে ত্যাগ, সেই ত্যাগের কোন বিনিময় হয় না। তাই আমরা আজকের এ সংবর্ধনার নাম দিয়েছি কৃতজ্ঞতা সমাবেশ। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তোলার লক্ষে আমরা যদি সুনাগরিক হই এবং যার যার অবস্থান থেকে সততার সাথে দেশ ও মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারি তবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হবে।