শেরপুরে প্রথমবারের মতো ভারতের চেন্নাইয়ের বারোমাসি শজনে ওডিসি থ্রির চাষ শুরু হয়েছে। তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা এই শজনের চাষ করে জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন বীজের অর্ডার আসছে তার কাছে।
পৌর শহরের নবীনগর মহল্লার বাসিন্দা সোহেল রানা পেশায় একজন ধান-চাল ব্যবসায়ী। ইউটিউবে বারোমাসি শজনের ভিডিও দেখে তিনি এই সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে ভারতের চেন্নাই থেকে এই জাতের শজনের বীজ সংগ্রহ করেন। পরে স্থানীয় এক নার্সারিতে সেগুলোর অঙ্কুরোদগম করান। চারা গজানোর পর সেগুলো তার বাড়ির পাশে দুই বিঘা পতিত জমিতে রোপণ করেন।
সোহেল রানা জানান, ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো ওডিসি থ্রি জাতের শজনের ১০০ চারা দিয়ে বাগান শুরু করেন। চারা রোপণের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসা শুরু হয়। এরপর পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ফল আসে। এই জাতের শজনে আকারে দুই থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এবং খেতেও সুস্বাদু। তাই বাজারে ব্যাপক চাহিদা।
খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, চেন্নাইয়ে প্রতিটি বীজ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ টাকা করে পড়েছে। তাই তার কাছ থেকেও অনেকেই ১০ টাকা করে বীজ নিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন বীজের ও চারার অর্ডার আসছে। আর এই জাতের শজনের বর্তমান বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
বাগান থেকেই শজনে নিয়ে যান পাইকাররা। বারোমাসি এই শজনে বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে স্থানীয় কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তারা।
নিয়মিত বাগান থেকে শজনে নেন শহরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবুল ফজল মিয়া। তিনি বলেন, ‘এ শজনে বাজারের অন্যান্য শজনের চেয়ে লম্বায় বড় ও দেখতে সুন্দর। সারা বছরই যেহেতু পাওয়া যায়, তাই বাজারে চাহিদাও বেশি। আমি নিয়মিত বাগানে এসে শজনে কিনে নিয়ে যাই। ২৫০ টাকা পাইকারি দিই। বাজারে ঘুরে ঘুরে আমরা একটু বেশিই বিক্রি করি।’
খরমপুরের বাসিন্দা গৃহিণী মিতু আক্তার বলেন, ‘ছাদে লাগানোর জন্য আমি ১০টি চারা অর্ডার করলাম। দুই সপ্তাহ পর এসে চারা নিয়ে যাব। বারোমাসি যেহেতু তাই আমি বাসার ছাদে গাছগুলো রোপণ করব।’
জেলা কৃষি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিবানী রাণী নাথ বলেন, ’বারোমাসি শজনে গাছ দ্রুত বাড়ে। চারা রোপণের ছয় মাসেই ডাঁটা ধরে এবং সারা বছরই ডাঁটা পাওয়া যায়। পূর্ণবয়স্ক একটি গাছে ১ হাজার ৬০০টি ডাঁটা হয়। সাধারণত ২০টি ডাঁটায় ১ কেজি হয়। এ হিসাবে একটি গাছে ২ মণ ডাঁটা ধরে। ৮০ টাকা কেজি হিসাবে এর দাম ৬ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া শজনে চাষের জন্য উপযুক্ত।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ‘এবারই প্রথমবারের মতো জেলায় চেন্নাইয়ের বারোমাসি এ শজনের চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিত বাগানটি পরিদর্শন করছে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া যদি কোনো কৃষক বা কৃষি উদ্যোক্তা এই জাতের শজনের চাষ করতে চায়, আমরা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’