শেরপুরে বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনোস্টিক সেন্টার পরিচালনায় অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে জেলা আইন-শ্খৃলা কমিটির মাসিক সভায়। সোমবার (১১ নভেম্বর) জেলা প্রশাসনের তুলসীমালা ট্রেনিং সেন্টার কাম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বিষয়ে সরগরম আলোচনার প্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনার কলি মাহবুব উদ্বেগ প্রকাশ করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নমিতা দে’কে আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিশেষ সভা আহবান এবং আগামী ১ মাসের মধ্যে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সময় বেঁধে দিতেও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ সভায় পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
সভায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান অতিসম্প্রতি শহরের অনুমোদনবিহীন ইউনাইটেড হাসপাতালে সিজারকালে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, অনভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে ওই সিজার হওয়ার কারণেই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে যা খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
এই বিষয়ে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম বলেন, ওই ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই ক্লিনিকে নবজাতকের পায়ে একটি কাটা দাগ রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, যে চিকিৎসক ওই সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন তার কোন ধরনের অপারেশন করার অনুমতি বা ক্ষমতা নেই।
এসময় সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্টাচার্য জেলায় অনুমোদনবিহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিকের ছড়াছড়ির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণের কোন ব্যবস্থা নেই। মেডিকেল বর্জ্যগুলো পৌরসভার সাধারণ বর্জ্যরে সাথে মিশে যাচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিভিল সার্জন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধির দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাসেল নোমান জানান, হাসপাতালগুলোতে ইনসিনারেটরের মাধ্যমে মেডিকেল বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার বিধান থাকলেও এখানকার বেসরকারি কোন ক্লিনিক বা হাসপাতালেই ইনসিনারেটরের ব্যবস্থা নেই। সঙ্গত কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে হাসপাতালগুলোর কোন ছাড়পত্রও নেই।
এসভায় নালিতাবাড়ীতে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকিব ইসলাম অমিকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় লাশ উদ্ধারসহ ঘাতকদের গ্রেফতারে পুলিশের সাফল্যসহ জেলা সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, আমরা জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করছি। এজন্য সকলের সহযোগিতাও পাচ্ছি। নালিতাবাড়ীতে শিশু অমি হত্যার ঘটনাতেও স্থানীয় পৌর মেয়রসহ সকলের সহযোগিতা পেয়েছি বলেই দ্রুত ওই নির্মম হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারসহ বেশ কিছু আলামত জব্দ ও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে, যা তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ওই শিশুকে অপহরণের ৫/১০ মিনিটের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। সেইসাথে শহরের যানজট নিরসনে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রণসহ লাইসেন্স সীমিতকরণ, সীমান্তে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখা, সিএনজিচালিত অটোরিক্সার ভাড়া নির্ধারণসহ ব্রহ্মপুত্র ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদা আদায় বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শেরপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনার কলি মাহবুবের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ছারওয়ার জাহান, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আসাদুজ্জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন, নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান, ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ, নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান, শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াদুদ অদু, পৌর প্যানেল মেয়র আতিউর রহমান মিতুল, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ্ব আসাদুজ্জামান রওশন, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোবারক হোসেন, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাসুদুর রহমান তালুকদার, প্রেসক্লাব সভাপতি শরিফুর রহমান, সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্টাচার্য প্রমুখ। সভায় কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি শেরপুর শহরের ইউনাইটেড হাসপাতালে সিজারকালে নবজাতকের অঙ্গ কেটে প্রাণহানির ঘটনার পর জেলায় অনুমোদনবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। ফলে বিষয়টি সর্বাধিক আলোচনায় স্থান পায় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায়।