‘শিক্ষকদের দিয়েই শিক্ষায় রূপান্তর শুরু’-এমন প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৫ অক্টাবর) শেরপুরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণসাক্ষরতা অভিযানের সহায়তায় দরিদ্র সমাজ উন্নয়ন সংস্থা এ আলোচনার সভার আয়োজন করে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তুলসিমালা সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান। এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ। অনুষ্ঠানে প্রতিপাদ্যের ওপর মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দরিদ্র সমাজ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক নাহিদা সুলতানা ইলা। অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন দরিদ্র সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. ইমান আলী, প্রাথমিক শিক্ষক নেতা ইশরাত জাহান শম্পা, প্রধান শিক্ষক সাজ্জাত হোসেন, করুণা দাস কারুয়া, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জিয়াউর রহমান জুয়েল ও সাংবাদিক হাকিম বাবুল প্রমুখ।
এসময় শিক্ষক নেতৃবৃন্দ শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির দাবী জানিয়ে বলেন, শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো করতে হবে। ভালো কাজের স্বীকৃতি প্রদানে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকরা যাতে নির্বিঘেœ শ্রেনী কক্ষে পাঠদান করতে পারেন, তারা যাতে নির্যাতন/হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য তাদের নিরাপত্ত ানিশ্চিত করতে হবে। নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী ২০২৩ সাল থেকে নতুন পাঠ্যক্রমে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। এজন্য নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের যথাযথভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। শিক্ষার এখন নতুন শ্লোগান হলো-জীবন ব্যাপী শিক্ষা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, শিক্ষকরা এখন বহু ধারায় বিভক্ত। শিক্ষকের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার জন্য নিজেদেরকেই আগে সংশোধন হতে হবে। শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ থকলে তাদের শক্তি এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। নিয়োগ বিধির নানা জটিলতা এবং পদ্ধতিগত ও ব্যবস্থাপনা ত্রæটির কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেণ তিনি বলেন, তাই বলে থেমে থাকলে চলবেনা। শিক্ষকরা হলেন শিশুর শেষ আশ্রয়স্থল। আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে সঠিক দায়িত্ব পালন করি, তবে একদিন অবশ্যই পরিবর্তন আসবে।
মুলপ্রবন্ধে বলা হয়, আমাদের দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। যা অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশী। এ বিপুল জনসংখ্যক শিক্ষার্থীকে মানব সম্পদে রূপান্তর করাটাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতের দ্রæত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ-খাওয়ানোর জন্য পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষকদের নতুনভাবে প্রস্তুত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধি, সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণী চিন্তার উন্নয়ন ঘটানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা গত উন্নয়ন ও রূপান্তর জরুরী। সেইসাথে পর্যাপ্ত সম্পদ ও উপকরণ এবং দক্ষ ও কার্যকর পরিচালনা ব্যবস্থার আওতায় শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের ক্ষমতায়ন, নেতৃৃত্ব বিকাশ, পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ও যথাযথ সম্মানী প্রদান করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী। তবেই সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমুলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ তৈরী হবে।
অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাকর্মকর্তা, শিক্ষক, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।