শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার তিন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৭৭টি গ্রাম । তন্মধ্যে- শেরপুর সদরের ৮ ইউনিয়নের ৩০টি, শ্রীবরদীর ২ ইউনিয়নের ৩৫টি এবং নকলার ৪ ইউনিয়নের ১২ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শেরপুর-জামালপুর সংযোগ সড়কে চলাচলকারি সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গত ৩৬ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এতে শেরপুর-জামালপুর সংযোগ সড়কের ডাইভারশনের উপর দিয়ে চার ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে শেরপুরের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রবাহ বৃদ্ধি ও নদের বেড়ি বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে সদর উপজেলার চরপক্ষীমারি, কামারেরচর, চরমোচারিয়া, লছমনপুর, বলায়েরচর বেতমারী ,ঘুঘরাকান্দি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ফলে এসব এলাকার চলতি রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ । পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। অনেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মিয়-স্বজনের বাড়িতে এবং উচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। মানুষের পাশপাশি গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসিরা। চরপমিারি ইউনিয়নের কুলুরচর-বেপারীপাড়া গ্রামের বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ঘরবাড়ি হারা অন্তত ৩শ পরিবার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. জাফর মিয়া জানান, ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে থাকা লোকজনের জন্য কুলুরচর-বেপারিপাড়া সরকারি প্রাাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হলেও কোনো ধরনের সহায়তা কিংবা কিংবা ত্রাণ তৎপরতা নেই। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু গত ৫ দিন অতিবাহিত হলেও কেউ কোন সাহায্য করছেন না। পানিবন্দি লোকজন সরকারি কোন ত্রাণ না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তবে স্থানীয় মশগুল মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর দেয়া পরিবার প্রতি এক কেজি করে চিড়া আশ্রয় কেন্দ্রে বিতরন করা হয়েছে।
চরপমিারি ইউনিয়নের চয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ জানান, তার ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের সবগুলোই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। পানি এখন ঘরে প্রবেশ করছে। নতুন করে বেপারীপাড়া এলাকায় শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।
বন্যার পানিতে জলমগ্ন হওয়ায় শেরপুর সদরের ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা শিা কর্মকর্তা মো. নূরে আলম মির্ধা।
শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বন্যায় শেরপুর সদরের চরাঞ্চলের অন্তত ১৫ হাজার লোক পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যার পানিতে ডুবে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৭ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন জানান, শেরপুর সদরে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ৪ উপজেলার তিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য ২৫ মেট্রিক টন চাল ও ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (১৮ আগষ্ট) বন্যা দূর্গত এলাকা কামারেরচর ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি।
ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বাড়ার কারণে জেলার শ্রীবরদী উপজেলার ভেলুয়া ও খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়নের অন্তত ৩০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে । শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন,এ দুই ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ভেলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের ১১ টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে । পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওইসব গ্রামের ১০ হাজার মানুষ। ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পানি উঠায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার (১৮ আগষ্ট) শ্রীবরদী উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের বানভাসিদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেন শেরপুর-৩ আসনের এমপি প্রকৌশলী এ.কে.এম ফজলুল হক চাঁন।
শেরপুর টাইমস/ বা.স