শেরপুরে পৃথক দু’টি হত্যা মামলার রায়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড ও একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে। ৩১ জুলাই সোমবার দুপুরে শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ মোহাম্মদ মুসলেহউদ্দিন ওই রায় ঘোষনা করেন।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, হালুয়াঘাট উপজেলার ধোপাগোছনা গ্রামের কেশব চন্দ্র দাসের ছেলে রঞ্জিত চন্দ্র দাস শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা গ্রামের মনেন্দ্র চন্দ্র দাসের মেয়ে রানু দাসকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে রঞ্জিত শ্বশুর বাড়ীতে থাকতো।
স্বামী শুকদেবকে নিয়ে একই বাড়ীতে বসবাস করত রঞ্জিতের শ্যালিকা চানবালা (২৮)। দুই ভায়েরা একসাথে বসবাস করায় মাঝে মধ্যেই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো।
২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় পারিবারিক কলহের জেরে দুলাভাই রঞ্জিতের সাথে শ্যালিকা চানবালার কথা-কাটাকাটি হয়। এসময় রঞ্জিত একটি ধারালো দা নিয়ে চানবালার ঘরে ঢুকে তাকে কুঁপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিৎকার শুনে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন এসে রঞ্জিতকে আটক করে পুলিশে দেয় এবং আহত চানবালাকে শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। ওইদিন রাতে সে মারা যায়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মনেন্দ্র চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ঝিনাইগাতী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০ ফেব্রুয়ারী আসামী হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। তদন্ত শেষে একই বছর ২ মে ঝিনাইগাতী থানার উপ-পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
মামলায় ম্যাজিষ্ট্রেট, চিকিৎসকসহ ৭ জন সাক্ষ্য প্রদান করে। সোমবার সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে বিচারক রঞ্জিত দাসকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন।
এদিকে ২০০৯ সালের ১২ জানুয়ারী সকালে শেরপুর সদর উপজেলার পাঞ্জরভাংগা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে নিজাম উদ্দিন নামে এক কৃষক খুন হন। ওইদিন নিজামউদ্দিনের দখলে থাকা একখন্ড জমি দখল নিতে আসে প্রতিবেশী আবেদ আলী ও তাঁর লোকজন। এসময় নিজাম ও তার ভাই শাজাহান বাধা দিলে আবেদ আলী গং রাম দা, কিরিস ও লাঠিসোঠা নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। হামলায় নিজাম উদ্দিনের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ গুরুতর জখম হয়।
তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ময়মনসিংহ ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন গভীররাতে নিজাম উদ্দিন মারা যান।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই মীর জাহান বাদী হয়ে ১৩ জনকে আসামী করে শেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে একই বছর ২৪ মে সদর থানায় উপ-পরিদর্শক রজব আলী ১৩ জনের নামে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
৮ জনের সাক্ষের ভিত্তিতে সোমবার বিচারক আসামী আবেদ আলীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, ৪০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন।
রায়ের সত্যতা স্বীকার করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন ঠান্ঠু বলেন, রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট হয়েছে। আসামী পক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।