শেরপুরে মেধাবী কলেজছাত্রী স্ত্রী আশরাফুন্নাহার লোপাকে নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর মামলায় যৌতুকলোভী স্বামী ডিএমপি পুলিশের এসআই শাহিনুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি। তিনি ১১ জুন রবিবার দুপুরে শেরপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ রজনীগন্ধায় অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উপদেষ্টা হিসেবে বক্তব্য দানকালে ওই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি ওই ঘটনায় এসআই শাহিন ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
জেলা প্রশাসক ড, মল্লিক আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে তার স্বাগত বক্তব্যের পর থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে মেধাবী কলেজছাত্রী লোপাকে নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দাসহ দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন জেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি, পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. একেএম রিয়াজুল হাসান, প্রবীণ সংগঠক আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াদুদ অদু, ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি এডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু, জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান শামছুন্নাহার কামাল, প্রেসকাব সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য, শহর কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক কাজী মতিউর রহমান প্রমুখ। তাদের বক্তব্যের বিষয়ে জেলা পুলিশের তরফ থেকে জবাব দিতে গিয়ে পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি বলেন, লোপাকে নির্যাতনের ঘটনায় মূল আসামী পুলিশ জানার পরও যেহেতু প্রাথমিক সত্যতা জেনে মামলা নেওয়া হয়েছে, সেহেতু ডিপার্টমেন্টের লোক বলেই সনহানুভূতি দেখানোর কোন কারণ নেই। অন্যায় করে থাকলে তাকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশ না হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য এখনও খুব একটা সময় যায়নি। তদন্ত চলছে। তদন্তের মধ্যেই সবকিছুর ফয়সালা হতে পারে।
এর আগে ওই ঘটনায় পুলিশের এসআই শাহিন ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ বিচার দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেন জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি জয়শ্রী দাস লক্ষ্মী ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফুন্নাহার। ওইসময় সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান আরা যুথী, সাংগঠনিক্ সম্পাদক আইরিন পারভীন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর নিরু শামছুন্নাহার নীরা, রৌশনারা বেগমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জেলা সদর হাসপাতালে ৫ দিন চিকিৎসার পর লোপার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির ৪ দিন পরও তার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। ডান চোখ ও কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত ক্ষত নিয়ে সেখানেও এক্সরেসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও লোপার কাশির সাথে রক্ত বের হওয়া বন্ধ না হওয়ায় রবিবার সকালে সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ডাঃ এহসানুর রহমানের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে তার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে মামলার ৭ দিন পরও যৌতুকলোভী স্বামী এসআই শাহিন ও তার কোন সহযোগী গ্রেফতার না হওয়ায় মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশকরেছেন নির্যাতিতা কলেজছাত্রীর পরিবার, এলাকাবাসী, মহিলা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।
উল্লেখ্য, শেরপুর শহরের দমদমা মহল্লার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের একমাত্র কন্যা ও সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী লোপাকে পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের বাড়িতে গত ২২ মে রাতে ২০ লাখ টাকার যৌতুকের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অমানসিক নির্যাতন চালায় স্বামী এসআই শাহিন ও তার পরিবারের লোকজন।