করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ও মানুষকে ঘরে রাখতে জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে শেরপুরে প্রথমবারেরমতো চালু হয়েছে অনলাইন ইফতার বাজার। এই ইফতার বাজারের মাধ্যমে শেরপুরের সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই ই-কমার্স ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও মুঠোফোনে কল করেই সাশ্রয়ী মূল্যে ইফতার কিনতে পেরেছে এবং প্রতিদিনই ইফতার বাজারের পক্ষ থেকে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষদের বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করেছে। শেরপুরের কয়েকজন তরুণ গণমাধ্যমকর্মীর প্রচেষ্টায় এই অলাভজনক উদ্যোগের মাধ্যমে খুব সহজেই মানুষ এই সেবা গ্রহণ করতে পেরেছে। এতে খুশি শেরপুরবাসী।
তথ্যমতে, ইফতার বাজারের পক্ষ থেকে পুরো রমজানজুড়ে ৭৭০টি প্যাকেট ইফতার অর্ডার ডেলিভারি সম্পন্ন এবং এছাড়া ১৫০ কেজি মিষ্টান্ন, ১২০ কেজি ফল অর্ডার ডেলিভারি সম্পন্ন করেছে ইফতার বাজার টিম। প্রতি ডেলিভারি খরচের পুরোটা ও বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগিতায় ২১দিনে পুরো জেলাজুড়ে ১৫৬৫প্যাকেট ইফতার বিনামূল্যে বিতরণ করেছে তরুণ সাংবাদিকদের এই দল। কখনো বিত্তবান ও অসহায়, আবার কখনো প্রতিবন্ধী ও ছিন্নমূল মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেে এই ইফতার। প্যাকেটের মধ্যে ছিলো ৪টি খেঁজুর, ১টি পেঁয়াজু, ১টি বেগুনী, ১প্যাকেট ছোলা বুট, ১পিস জিলাপী, ১টি দেশী কলা, ১প্যাকেট মুড়ি। যার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৬০টাকা।
ইফতার বাজারের উদ্যোক্তারা জানান, শেরপুর জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, শেরপুর প্রেস ক্লাব, শেরপুর সদর থানা, শেরপুর ইয়্যুথ রিপোর্টার্স ক্লাব, করোনা ইমার্জিন্সি রেসপন্স টিমের ৮০ থেকে ১৫০টি অর্ডার ছিলো বেশ চ্যালেঞ্জের। নতুন চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করেছে তাদের ই-কমার্স ব্যবসাকে; যা পরবর্তীতে শেরপুরে একটি সমৃদ্ধ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠায় বেশ কাজে লাগবেও বলে জানান তরুণ এই সাংবাদিকরা।
ইফতার বাজারের কারিগরি সহযোগী বিডি আইটি জোনের কর্ণধার ইফতেখার পাপ্পু বলেন, আমাদের আইটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমরা সবসময়ই অলাভজনক বিভিন্ন উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে কাজ করি। ইফতার বাজার নিয়ে আমাদের কখনোই ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা ছিলো না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে জেলার প্রান্তিক মানুষের হাতে আমাদের ইফতার পৌঁছে গেছে, তাতেই আমরা তৃপ্ত। ভবিষ্যতেও আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চাই।
ইফতার বাজারের উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক এসএম জুবায়ের বলেন, প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকেই আমাদের কর্মযজ্ঞ শুরু হতো। দিনে প্রায় ১০থেকে ১৫০টি অর্ডার আসতো। ইফতারের আগেই সবকিছু রেডি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার মানসিক চাপ থাকতো প্রচুর। এরপরেও আমরা সফলভাবে ডেলিভারি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৮০ প্যাক ইফতার বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। আমাদের ইফতার হাতে পেয়ে মানুষের হাসিটাই আমাদের বড় অর্জন।
ইফতার বাজারের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও একাত্তর টিভির প্রতিনিধি শাকিল মুরাদ বলেন, করোনা মহামারীতে মানুষের ঘরে থাকা জরুরী। আমরা যেহেতু পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বাইরেই থাকি, তাই আমরা মানুষকে ঘরে রাখতে জেলা প্রশাসনের সাথে স্বাচ্ছন্দে এই কাজ করেছি। প্রথমবারের মত এই চ্যালেঞ্জ আমরা শতভাগ পাড়ি দিতে পেরেছি বলে আমি মনে করি। বাকীটা আমাদের গ্রাহক ও উপকারভুগীদের হাসিমুখটাই আমাদের অর্জন।
ইফতার বাজারের প্রতিষ্ঠাতা ও চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি ইমরান হাসান রাব্বী বলেন, মানুষকে সাশ্রয়ীমূল্যে সবচেয়ে ভালো ইফতার পৌঁছে দেয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। প্রতিদিনই নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে, এতে করে আমরা সেবার মানও বাড়িয়েছি প্রতিনিয়ত। এছাড়া আমাদের বড় অর্জন হলো, জেলাজুড়ে দেড় হাজার মানুষের কাছে বিনামূল্যে ইফতার পৌঁছে দেয়া। আমাদের যারা আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন, তাদের প্রতি আমাদের পুরো অর্জনটা উৎসর্গ করতে চাই।
এই উদ্যোগ সম্পর্কে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (উপসচিব) এটিএম জিয়াউল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বলেন, রোজার পরেও চলার পথে কোথাও কোন হতদরিদ্র, দুখী, কষ্টে থাকা মানুষের দেখা মিললে আমরা পাশে থাকতে চাই। শেরপুরে কোন মানুষই অসহায় থাকবেনা- এটি আমাদের চ্যালেঞ্জ হতে পারে এবং আমরা এই চ্যালেঞ্জ নিতেও পারি।