তুচ্ছ ঘটনায় এক স্কুলছাত্রকে মারপিটের জের ধরে দুই গ্রামবাসীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় এখনো থানায় মামলা দায়ের হয়নি । এদিকে আতংকে দু’দিন ধরে অচল হয়ে পড়েছে শেরপুর শহরের উপকণ্ঠ আখেরমামুদের বাজার।
বুধবার সকাল থেকে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। পরে থানা পুলিশের নিরাপত্তার আশ্বাসে বিকেল ৩টার পর কিছু দোকানপাট খুললেও ছিল না ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম। জমেনি বাজার। এখনও আতঙ্ক না কাটায় ওই বাজারে সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে হামলার ঘটনায় রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গুরুতর আহত স্কুলছাত্র অন্তর (১৩) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। আর পাল্টা হামলায় মোবারকপুর আখেরমামুদের বাজার এলাকার সোহাগ (৩৫), এরশাদ (২৫), আফাজ (৫০), সোহেল (২০), সাদিম (১৫), রওশন আরা (৫০), ছামিদুল (৩০) ও ছানু (২৫) আহত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে ওইসব ঘটনায় এখনও থানায় কোন মামলা বা অভিযোগ দায়ের হয়নি। যে কারণে গ্রেফতার হয়নি কোন পক্ষের লোকজনই।
জানা যায়, সোমবার রাতে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে শহরের মোবারকপুর আখেরমামুদের বাজার এলাকার ছানু ও সাদিমসহ কয়েক যুবক ওই বাজারে পার্শ্ববর্তী চরশেরপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের স্কুলছাত্র অন্তরকে প্রকাশ্যে পেটাতে থাকে। ওইসময় বাঁধা দিতে গিয়ে অন্তরের পিতা জালাল উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন আহত হয় ওই যুবকদের হাতে। খবর পেয়ে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের লোকজন বাজারে ছুটে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার ছড়িয়ে পড়ে এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
পরে থানা পুলিশসহ স্ব-স্ব এলাকার জন প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। আর গুরুতর অবস্থায় স্কুলছাত্র অন্তরকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরদিন সকালে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্কুলছাত্র ‘অন্তর মারা গেছে’-এলাকায় এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ২ শতাধিক লোক লাঠিসোটা নিয়ে আখেরমামুদের বাজারে হামলা চালায় ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে দোকান-পাট ভাংচুর করে। ওইসময় তাদের হামলায় কাঁচামালের দোকানী ছামিদুলসহ ১০ জন গুরুতর আহত হয়। এরপর স্থানীয় কয়েকশ এলাকাবাসী সমবেত হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে মুহূর্তেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বাজারে থাকা লোকজন দিগি¦বিদিক ছুটোছুটি করে নিরাপদে চলে যায়। ওইসময় শেরপুর-শ্রীবরদী সড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে পড়ে।
পরে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমানসহ পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। ওইসময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উভয় এলাকার লোকজনকে শান্ত থাকার আহবান জানান। এরপর রাতে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার এলাকার রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বাজার পরিদর্শন করেন। সেইসাথে তিনি উভয় এলাকার নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে দ্রুত উদ্ভূত অবস্থা নিরসনের আহবান জানান।
আখেরমামুদ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার কালু গাজী জানান, স্কুলছাত্র অন্তরকে মারপিটের ঘটনায় স্থানীয় ২-৪ জন জড়িত। বাজারের ব্যবসায়ী কোন বা এলাকাবাসী সেই ঘটনাকে কোনভাবেই সমর্থন করেনি। তারপরও ব্যবসায়ীদের উপর হামলাসহ দোকানপাট ভাংচুরের ঘটনা দুঃখজনক। আর এজন্য দু’দিন যাবত বাজারটি অচল হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে চরশেরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সুরুজ বলেন, অন্তর নামে একজন নিরীহ স্কুলছাত্রকে ওই এলাকার কয়েকজন যুবক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। অন্তরকে রক্ষা করতে গিয়ে তার বাবাকেও রক্তাক্ত হতে হয়। অন্তর এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কিন্তু ওই বিষয়ে হামলাকারী যুবকদের অভিভাবকদের তরফ থেকে কোনোরকম আন্তরিকতা না দেখানোর কারণে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বুধবার বিকেলে শেরপুর টাইমসকে বলেন, এক স্কুলছাত্রকে মারপিটের জের ধরে আখেরমামুদের বাজারে দুই এলাকার লোকজনদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু এখনও কোন পক্ষ থেকেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।